নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে তৃণমূলের আরও চার নেতার মামলা

কলকাতা হাইকোর্ট
প্রথম আলো ফাইল ছবি

দিনে দিনে জটিল হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির আবহাওয়া। রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন সম্পন্ন হলেও এখনো এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ উঠছে। প্রথম অভিযোগ উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিক থেকে। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর প্রতিপক্ষ বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী কারচুপি করে জয়ী হয়েছেন। এই ফল মেনে নেননি তিনি, শরণাপন্ন হয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের।

তবে এখানেই থেমে নেই তৃণমূল কংগ্রেস; গতকাল শুক্রবার তৃণমূলের পরাজিত আরও চার প্রার্থী নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন কলকাতা হাইকোর্টে। এই চার প্রার্থী হলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ দক্ষিণ আসনের তৃণমূল প্রার্থী আলো রানী সরকার। তিনি বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদারের কাছে ২ হাজার ৪ ভোটে হেরে যান। পুরুলিয়ার বলরামপুর আসনে তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো ৪২৩ ভোটে হেরে যান বিজেপি প্রার্থী বাণেশ্বর মাহাতের কাছে। হুগলির গোঘাট আসনে তৃণমূল প্রার্থী মানস মজুমদার ৪ হাজার ১৪৭ ভোটে হেরে যান বিজেপি প্রার্থী বিশ্বনাথ কারকের কাছে। আর পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না আসনে ১ হাজার ২৬০ ভোটে তৃণমূল প্রার্থী সংগ্রাম কুমার দলুই হেরে যান বিজেপি প্রার্থী অশোক দিন্দার কাছে। তাঁরা পরাজয় মেনে নেননি। এ নিয়ে চারটি পৃথক মামলা হয়েছে। আবেদন করেছেন আসনের ভোট পুনর্গণনার।

এদিকে তৃণমূলের এসব মামলার ঘটনায় চুপ করে বসে নেই বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ গতকাল শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরাও কারচুপির অভিযোগ এনে আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী কোর্টে যেতেই পারেন। আমরাও যাচ্ছি বহু অভিযোগ নিয়ে। ভোটে কারচুপি, নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষসহ নানা অভিযোগ নিয়ে আমরাও আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছি।’ গণনাকেন্দ্রে কারচুপির অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টে তাঁরাও আবেদন করবেন বলে জানান তিনি।

এদিকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দর এজলাসে গতকাল এই মামলার শুনানির কথা থাকলেও মমতা আদালতে হাজির না হলে সেই মামলার তারিখ পিছিয়ে ২৪ জুন করা হয়েছে। তবে এই বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে তৃণমূল। দলটির নেতারা বলছেন, কৌশিক চন্দর সঙ্গে বিজেপি যোগ রয়েছে। এই অভিযোগ এনে বেঞ্চ পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন দলটির নেতারা। এ জন্য আবেদনও জমা দিয়েছেন মমতা। শুধু তা–ই নয়, এই নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীরা মামলা স্থানান্তরের দাবিতে আদালতে বিক্ষোভও করেছেন। মমতা নন্দীগ্রাম আসনে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে ১ হাজার ৯৫৬ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন।
মমতার নির্বাচনী মামলা প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন, মামলায় হেরে যাবেন। তাই এসব বাহানা করছেন তিনি।

দিলীপ বলেন, ‘বিচারপতি কৌশিক চন্দ যখন আইনজীবী ছিলেন, তখন কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে এখন কেন তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে? উনি নিজের মেধায়, যোগ্যতায় আইনজীবী থেকে বিচারপতি হয়েছেন। তৃণমূলের বহু সমর্থক আইনজীবীও তো বিচারপতি হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের স্পিকারও তো তাদের দলের। তাতে কি আমরা স্পিকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি?’