পশ্চিমবঙ্গে আসছেন অমিত শাহ, উঠতে পারে এনআরসি প্রসঙ্গ

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে আসছেন। পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন সামনে রেখে প্রচারের লক্ষ্যে ৬ ফেব্রুয়ারি রাজ্যটিতে ‘পরিবর্তনযাত্রা’ শুরু করেছে বিজেপি। চতুর্থ দিনে আজ কোচবিহারে এ যাত্রা শুরুর পর জনসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। সেই জনসভায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (এনআরসি) নিয়ে কথা উঠতে পারে। এ রাজ্যের নির্বাচনে এক নিয়ামক শক্তি মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা এনআরসি নিয়ে অমিত কী বলেন, সেটা শোনার অপেক্ষায়।

রাজ্যের পাঁচ প্রান্ত থেকে চলবে বিজেপির পরিবর্তনযাত্রা। ইতিমধ্যে তিনটি যাত্রা শুরুও হয়েছে। এ তিন যাত্রার সূচনা করেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। আজ দুপুরে চতুর্থ যাত্রার সূচনা হবে কোচবিহার শহরের রাসমেলা ময়দান থেকে। পরিবর্তনযাত্রা স্থগিতের দাবিতে আজ কলকাতা হাইকোর্টে হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানিও আছে।

আজ চতুর্থ পরিবর্তনযাত্রার সূচনার আগে কোচবিহারের ঐতিহাসিক মদনমোহন মন্দিরে পূজা দেবেন কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যাত্রা শুরুর পর অমিত শাহ যাবেন উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ‘মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থভূমি’ ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে। সেখানে মতুয়া সম্প্রদায়ের আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।

বারবার মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বললেও এনআরসি পাস হওয়ার পর সেই আইনকে এখনো বলবৎ করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। এতে ক্ষুব্ধ মতুয়া সম্প্রদায়।

শ্চিমবঙ্গের বনগাঁ, রানাঘাট ও কৃষ্ণনগর লোকসভার আসন তিনটি এখনো মতুয়াদের নিয়ন্ত্রণে। গত ৩০ জানুয়ারি ঠাকুরনগরে গিয়ে অমিত শাহর এনআরসি নিয়ে কিছু বলার কথা থাকলেও সেই সময়ে রাজধানী নয়াদিল্লির ইসরায়েলি দূতাবাসের কাছে বিস্ফোরণের ঘটনায় সেই সভা বাতিল হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন মতুয়ারা।

মতুয়াদের ক্ষোভের কথা শুনে অমিত শাহ এর আগে বলেছিলেন, তিনি ঠাকুরনগরে যাবেনই। তবে তাঁর না যাওয়া পর্যন্ত সভামঞ্চ খুলে না ফেলার আহ্বান জানান তিনি। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেই আজ ঠাকুরনগরে পা রাখছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

হাইকোর্টে শুনানি আজ পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ‘পরিবর্তনযাত্রা’ স্থগিতের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানি হবে আজ। গত মঙ্গলবার ওই মামলার শুনানি হলেও বিজেপি মামলাটিতে পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন জানালে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তা আমলে নিয়ে আজ মামলার শুনানির আদেশ দেন।
পরিবর্তনযাত্রা শুরুর আগে একে ‘রথযাত্রা’ বলে ঘোষণা করেছিল বিজেপি। কিন্তু তাতে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ থাকার অভিযোগ ওঠায় পরে বিজেপি এর নাম পাল্টে ‘পরিবর্তনযাত্রা’ করে। এই যাত্রা যাতে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ না করে ও রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির যাতে আরও অবনতি না হয়, সেই লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তনযাত্রা স্থগিতের দাবিতে জনস্বার্থ মামলা করেন কলকাতার বিশিষ্ট আইনজীবী রমা প্রসাদ সরকার। কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের দ্বারা গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে এ মামলা হয়।

মঙ্গলবার মামলাটি আদালতে শুনানির জন্য উঠলে বিজেপির আইনজীবী মহেশ জেঠমালানি আবেদন করেন, যেহেতু এ মামলার সঙ্গে বিজেপির স্বার্থ জড়িত রয়েছে, তাই মামলায় বিজেপিকে পক্ষভুক্ত করা হোক। আবেদনে সাড়া দিয়ে এ মামলায় বিজেপিকে পক্ষভুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে আজ এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত। মামলার আবেদনকারী রমা প্রসাদ সরকারের পক্ষে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন হলেও তাতে সাড়া দেননি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

এদিকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কাকদ্বীপ থেকে বিজেপির পঞ্চম ‘পরিবর্তনযাত্রা’ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কে এর সূচনা করবেন, বিজেপির পক্ষ থেকে তা এখনো জানানো হয়নি। তবে এক মাস ধরে এই যাত্রা চলার পর শেষের দিন কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে জনসভা হবে। সেই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।