পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় নিহত ১৪, কাল মমতার শপথ

সংবাদ সম্মেলনে তৃণমূলপ্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনপরবর্তী সংঘর্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বিজেপি ও তৃণমূল—উভয় দলের সমর্থকই রয়েছেন। আর আগামীকাল বুধবারই বিজয়ী তৃণমূল দলের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। মমতা রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

ভোট গণনার দিন গত রোববার দুপুর থেকে গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। সংবাদমাধ্যম সূত্রে বলা হয়েছে, এই ১৪ জনের মধ্যে বিজেপির ৯ জন, তৃণমূলের ৪ জন, আইএসএফের ১ জন রয়েছেন।

গতকাল বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কলকাতার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নির্বাচনপরবর্তী রাজনৈতিক সংঘর্ষে তাঁদের দলেরই আটজন মারা গেছেন। তাঁদের বহু সমর্থকের বাড়িঘর, দলীয় অফিস ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। বহু বিজেপি কর্মী আহত হয়েছেন। নির্বাচনপরবর্তী সংঘর্ষ এবং প্রাণহানি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে।

অন্যদিকে, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নির্বাচনপরবর্তী সংঘর্ষে প্রাণহানির বিষয় নিয়ে রাজ্যের পুলিশের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন।

বিজেপি কাল পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ধিক্কার দিবসের ডাক দিয়েছে। আর এই দিবসের অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য আজ মঙ্গলবার কলকাতায় আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। তিনি দুদিন এখানে থাকবেন। সংঘর্ষে নিহত বিজেপির কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানাবেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে রাজ্যবাসীর প্রতি বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন। যদিও মমতা এবারের নির্বাচনে তাঁর পরাজয়কে মেনে নিতে পারেননি। বলেছেন, ‘নন্দীগ্রামে ইভিএম মেশিন পাল্টে দেওয়া হয়েছে। আরও অনেক কিছু করেছে ওরা। এটা মানা যায় না। এ নিয়ে আমরা আদালতে যাব।’

মমতা এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, দল ছেড়ে যাঁরা বিজেপিতে গেছেন, তাঁরা এখন দলে এলে স্বাগত।

কাল স্থানীয় সময় বেলা পৌনে ১১টায় রাজ্যপালের দপ্তর রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রীর পদে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে শপথ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এ নিয়ে এই রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য শপথ নিচ্ছেন। তিনিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর এ পদে বসছেন। সাংবিধানিক আইন অনুসারে মমতাকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাজ্যের কোনো একটি আসনে জয়ী হয়ে আসতে হবে।

অন্যদিকে, ৯ মে রাজভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে অনাড়ম্বরভাবে। ৬ ও ৭ মে নবনির্বাচিত বিধায়কেরা শপথ নেবেন।

এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিদায়ী স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের পরিষদীয় দলের নেতা মনোজ টিগ্গা, বিদায়ী বিরোধীদলীয় নেতা কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী, কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, প্রখ্যাত ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী, তৃণমূলের ভোট–কুশলী প্রশান্ত কিশোর প্রমুখকে। গতকাল সন্ধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি প্রথা মেনে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন। রাজ্যপাল তাঁকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত ওই পদে থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।