পশ্চিমবঙ্গে মন্ত্রীসহ চারজনের জামিনের কয়েক ঘণ্টা পর আবার বাতিল

সুব্রত মুখার্জি, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়
ফাইল ছবি

পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী, কলকাতার সাবেক মেয়র ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ফিরহাদ হাকিমসহ চারজনের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুরের কয়েক ঘণ্টা পর সিবিআইয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবার বাতিল করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে তাঁদের গতকাল সোমবার রাতে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গতকাল সকালে নারদ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই ফিরহাদসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। এঁরা হলেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও নবনির্বাচিত বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তৃণমূলের নেতা ও কলকাতা পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বর্তমান মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম, সাবেক মন্ত্রী ও নবনির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এবং কলকাতা পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বর্তমান বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়। গতকাল সকালে এই চার নেতাকে সিবিআই তাঁদের বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যায় কলকাতার সিবিআই কার্যালয় নিজাম প্যালেসে। অ্যারেস্ট অব ওয়ারেন্টে স্বাক্ষর করিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে বিকেলেই সিবিআইয়ের বিশেষ ভার্চ্যুয়াল আদালতে হাজির করা হয়। বিকেলেই চার নেতার জামিন নিয়ে শুনানি হয়। রাত ৮টা ২৮ মিনিটে অন্তর্বর্তী জামিন দেন বিচারক অনুপম মুখোপাধ্যায়। জামিন দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে।

তবে এই জামিনের বিরুদ্ধে রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিবিআই কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করে। আবেদনে জামিন বাতিলসহ মামলাটিকে ভারতের অন্য কোনো রাজ্যে স্থানান্তর করার আবেদন করা হয়। রাতেই হাইকোর্টে শুনানির পর জামিন বাতিল হয়। রাত দেড়টায় এই চার নেতাকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে। আগামীকাল বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনের পর নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের মুহূর্তে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ৯ মে তৃণমূলের তিন নেতা ও আরেক সাবেক নেতার বিরুদ্ধে নারদা অর্থ কেলেঙ্কারি মামলা চালানোর অনুমতি দেন। সেই অনুমতির জেরে সিবিআই গ্রেপ্তার করে ওই চার নেতাকে।

গ্রেপ্তারের পর সিবিআই এই চার নেতার বিরুদ্ধে অনলাইনে অভিযোগপত্র দেয়। বিকেলেই তাঁদের সিবিআইয়ের ভার্চ্যুয়াল আদালতে তোলা হয়। সেখানে শুনানি হয় দুই পক্ষের আইনজীবীদের। সিবিআই আবেদন করে অভিযুক্ত চার নেতাকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের। অন্যদিকে আসামিরা আবেদন করেন জামিনের। শুনানি শেষে আদালত চার নেতাকে জামিন দেন।

২০১৬ সালের মার্চে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের ঘুষ নেওয়ার এক কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়। তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে এই নারদা কেলেঙ্কারি মামলার তদন্তের ভার দেওয়া হয় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইকে। যদিও ২০১৬ সালে এই নারদ স্টিং অপারেশনের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর প্রথম এই মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট বা ইডি।

সেই মামলায় আসামি করা হয় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন চার মন্ত্রীসহ অন্যান্য তৃণমূল নেতাকে। কিন্তু মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মামলা চালাতে গেলে রাজ্যপালের অনুমতির প্রয়োজন হয়। সেই লক্ষ্যে সিবিআই রাজ্যপালের কাছে এই মামলা চালানোর জন্য অনুমতি চাইলে দীর্ঘদিন পর রাজ্যপাল এই চার নেতার বিরুদ্ধে মামলা চালানোর অনুমতি দেন। তৃণমূল বলেছে, সেই অনুমতি বেআইনি। সিবিআই রাজ্য বিধানসভার স্পিকারেরও কোনো অনুমতি নেয়নি।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একদল নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কের অর্থ গ্রহণের এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে দিল্লির নারদনিউজ ডটকম নামের একটি ওয়েব পোর্টাল।