পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা, বিজেপির বিধায়কদের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর রাজ্যজুড়ে শুরু হওয়া সহিংসতা এখনো থামেনি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকা থেকে সংঘর্ষের খবর মিলছে। চলমান সন্ত্রাসী ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের বিজেপির বিধায়কদের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এ সংঘর্ষে মারা গেছেন বিজেপি, তৃণমূল এবং আইএসএফের সদস্যরা। বিজেপি দাবি করেছে, তাদের ১৬ জন কর্মী ও সমর্থক এই নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন। বাড়ি ছাড়া হয়েছে প্রায় এক লাখ সাধারণ গ্রামবাসী।

সহিংসতায় উদ্বিগ্ন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। গতকাল রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গের নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের পর রাজ্যপাল বলেছেন, ‘রাজ্য এখন গভীর সংকটে। ভোট–পরবর্তী হিংসা, লুটতরাজ চলছে। উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হিংসাকবলিত এলাকাগুলোতে যাব। এটা আমার সাংবিধানিক কর্তব্য।’

এদিকে এই নিবাচনোত্তর সংঘর্ষের মুখে পড়ে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বহু বিজেপি কর্মী, সমর্থক এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এবার তাঁদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিজেপির নেতৃত্ব। মালদহে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু ঘোষণা দিয়েছেন, অবিলম্বে ঘরছাড়া বিজেপি কর্মীদের নিরাপত্তা দিয়ে নিজের ঘরে ফিরিয়ে আনতে হবে। নইলে এই রাজ্যজুড়ে পরে ঘরছাড়াদের ফিরিয়ে আনার আন্দোলন জোরদার হবে। তিনি এ কথাও বলেছেন, এই রাজ্যের প্রায় এক লাখ বিজেপি কর্মী–সমর্থক তৃণমূলের হামলার মুখে ঘরছাড়া হয়েছে।

বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির ওপর এ হামলায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিজেপির জয়ী ৭৭ জন বিধায়কের নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হবে। শুধু তা–ই নয়, নির্বাচনে পরাজিত বিজেপি প্রার্থীরাও তৃণমূলের হামলার মুখে পড়ছেন। তাঁদেরও নিরাপত্তা জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়।

গতকাল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। তিনি নেতা হওয়ার পর বিজেপির প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় কলকাতার হেস্টিংসে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমার লক্ষ্য হবে হিংসামুক্ত বাংলা গড়া। আমার সাফ কথা, আমরা বাংলায় হিংসা চাই না।’ শুভেন্দু এ কথাও বলেছেন, ‘তৃণমূল সরকারের যেকোনো গঠনমূলক কাজে আমি সহযোগিতা করব।’

এদিকে রাজ্যে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করার দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অনিন্দ্যসুন্দর দাস একটি জনস্বার্থ মামলা করেন। ৭ মে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের সমন্বয়ে গঠিত ৫ সদস্যের এক ডিভিশন বেঞ্চ শুনানি শেষে এই রাজ্যে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা বন্ধের লক্ষ্যে সরকারি পদক্ষেপ জানতে চান। গতকালই স্বরাস্ট্রসচিব হাইকোর্টের কাছে রিপোর্ট পেশ করে প্রকারান্তরে নিবাচনোত্তর সংহিংতার কথা স্বীকার করে নেন। পাশাপাশি রাজ্য সরকার আরও জানিয়ে দেন, এই সহিংসতা বন্ধের জন্য রাজ্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতাও এই বাংলায় কোনো রাজনৈতিক সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেবেন না।