পেগাসাস ইস্যুতে ভারতীয় পার্লামেন্টে তদন্তের দাবি

ভারতের পার্লামেন্ট ভবন।
ছবি: রয়টার্স

পেগাসাস ইস্যুতে ফোনে আড়ি পাতার ঘটনা তদন্তে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ভারতের পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় সাংসদেরা। গত রোববার ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার ‘পেগাসাস’ ব্যবহার করে দেশটির বেশ কিছু সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও রাজনীতিবিদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ ওঠে। এ তালিকায় ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীর নামও রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পার্লামেন্ট অধিবেশনে এ দাবি করার সময় বেশ কিছু সময় অধিবেশনের কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল অধিবেশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন বিরোধীদলীয় সাংসদেরা। গোয়েন্দাবৃত্তির অভিযোগ এনে এ ঘটনায় একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান তাঁরা। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগেরও দাবি ওঠে পার্লামেন্টে।

রোববার প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংবাদ সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজের সহায়তায় ১৭টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম একযোগে আড়ি পাতার ঘটনা প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে ৩৭ জন সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা ও মানবাধিকারকর্মীর স্মার্টফোনে আড়ি পাতা হয়েছে।

ভারতের সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট দ্য ওয়্যার জানায়, ভারতে ৪০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের ফোনে স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে আড়ি পাতা হয়। এর মধ্যে দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা রাহুল গান্ধীর নামও রয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অন্তত ৩০০ ভারতীয় নম্বরে আড়ি পাতা হয়। ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও অবশ্য দাবি করেছে, সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধ দমনে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে তারা এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।

বিরোধীদলীয় নেতাদের দাবি, মোদিবিরোধী সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক নেতাদের ফোনে ইচ্ছাকৃতভাবে আড়ি পেতেছে সরকার। এক বিবৃতিতে কংগ্রেস বলেছে, এটা দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা। তারা বলছে, পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে ফোনে আড়ি পেতে সরকার অবৈধভাবে বিভিন্ন মানুষের তথ্য ফাঁস করেছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বিষ্ণু গত সোমবার ফোনে আড়ি পাতার ঘটনা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সংস্থা দেশ ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ তদন্ত করতে পারবে। এটি একটি বৈধ প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, নিয়মবহির্ভূত কোনো আড়ি পাতার ঘটনা ঘটেনি।

মন্ত্রী বিষ্ণুর নিজের ফোনেও আড়ি পাতা হয়েছিল বলে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। দেশটির সরকার আড়ি পাতার বিষয়টি অস্বীকার করে বলছে, ভারতের কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থা নজরদারির জন্য পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেনেনি।