পেগাসাস তদন্তে ভারত নারাজ

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী
ছবি: এএফপি

পেগাসাসকাণ্ড বা ফোনে আড়িপাতার অভিযোগের কোনোরকম তদন্তের নির্দেশ না দেওয়ার প্রশ্নে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অনড়। সরকারের দাবি, নজরদারির এই অভিযোগ নির্ভেজাল ভারতবিরোধিতা। এই বিষয়ে সরকার তার আক্রমণাত্মক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে শুক্রবার।

ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণকে হেনস্তা করার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য শান্তনু সেনকে গতকাল শুক্রবার চলতি অধিবেশন শেষ হওয়া পর্যন্ত সাসপেন্ড করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার শুক্রবার সংসদ ভবন চত্বরে বলেছেন, তদন্তের কোনো প্রয়োজনই নেই। সরকার সবকিছু স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে। যাঁরা এই বিষয়ে সরকারের দিকে আঙুল তুলছেন, তাঁদের অন্য কোনো কাজ নেই।

রাজনীতিতেও তাঁরা পরাজিত। সরকার তদন্তে অনীহা প্রকাশ করলেও পেগাসাসকাণ্ডের তদন্তের জন্য বিশেষ দল গঠনের আরজি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে এক রিট আবেদন দাখিল করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় পেগাসাস নিয়ে বিবৃতি দিতে উঠলে তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রীর হাত থেকে কাগজ কেড়ে শান্তনু সেন ছিঁড়ে উড়িয়ে দেন। সেদিনই সরকার জানিয়েছিল, তৃণমূল সদস্যের বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের নোটিশ আনা হবে। গতকাল সকালে রাজ্যসভার নেতা পীযূষ গোয়েল দেখা করেন চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গে।

এরপর অধিবেশন শুরু হলে শান্তনুর বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান ঘোষণা করেন ভেঙ্কাইয়া। তিনি বলেন, সাংসদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হলো তাঁর অগণতান্ত্রিক ও অসংসদীয় আচরণের জন্য। সংসদের বর্তমান বর্ষাকালীন অধিবেশন চলবে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত। তত দিন শান্তনু সভায় যোগ দিতে পারবেন না।

এই ঘোষণার পর বিরোধীরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তৃণমূল সদস্য ডেরেক ওব্রায়ান বলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ পুরী ওই সময় শান্তনুকে মারতে গিয়েছিলেন। তাঁকে তিনি গালমন্দও করেছেন। অথচ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। বিরোধীরা গতকালও সুষ্ঠুভাবে সভার কাজ হতে দেননি।

তবে পেগাসাস নিয়ে বিরোধীরা সরব। সরকার তদন্তের দাবি না মানলেও যেভাবে প্রতিদিন কোনো না কোনো ব্যক্তির ফোনে আড়িপাতার খবর প্রকাশ পাচ্ছে, তাতে বিরোধীরা বিচার বিভাগের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন। বিরোধী নেতাদের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুন। বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও গতকাল এই দাবি জানান।

সংসদ ভবন চত্বরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে এই অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত। পদত্যাগ করা দরকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ দেশ, দেশের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজরদারির আওতায় নিয়ে ফেলেছেন। তাঁরা অপরাধী। তাঁরা যা করেছেন, তা রাষ্ট্রদ্রোহ ছাড়া অন্য কিছু নয়।

রাহুল বলেন, তাঁর প্রতিটি ফোনেই সরকার আড়ি পেতেছে। বন্ধু গোয়েন্দারাই তাঁকে এই বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল পেগাসাসকে একটি অস্ত্র বলে চিহ্নিত করেছে, যেটি সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার কথা। অথচ সরকার সেই অস্ত্র প্রয়োগ করছে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। জনগণের বিরুদ্ধে। কর্ণাটকে রাজনৈতিক লক্ষ্যে তারা এটি ব্যবহার করেছে। রাহুল বলেন, ‘আমি চোর-ছ্যাঁচড় নই।

দুর্নীতিগ্রস্ত নই। তাই আমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ রাহুল বলেন, যে কেউ চাইলেই এই নজরদারি ব্যবস্থা কিনতে পারবে না। শুধু সরকার পারে। সরকার সে জন্য টাকা খরচ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছে।

পেগাসাসকাণ্ডে নজরদারির তালিকা দিন দিন দীর্ঘতর হচ্ছে। গতকাল জানা যায়, নজরদারির আওতায় রয়েছে শিল্পপতি অনিল আম্বানি, রিলায়েন্স গোষ্ঠীর কর্তা টোনি জেসুদাসন, রাফাল সংস্থা দাসোর ভারতীয় কর্তা ভেঙ্কট রাও পোসিনা, সিবিআইয়ের সাবেক পরিচালক অলোক ভার্মা ও রাকেশ আস্তানার ফোন। সিবিআই কর্তাদের পরিবারের সদস্যদের ফোনও আড়িপাতার আওতা থেকে বাদ যায়নি। তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামা ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের একাধিক ফোন নম্বরেও আড়ি পাতা হয়েছিল।

পেগাসাসের নির্মাতা ইসরায়েলের এনএসও সংস্থার দাবি, তারা এই স্পাইওয়্যার ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সরকারকে বেচেছে। কোনো ব্যক্তি বিশেষ বা সংস্থাকে নয়। সেই প্রযুক্তি কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে, তা ঠিক করার ভার সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের।