পেগাসাস দিয়ে আড়ি পাতা হয়েছে কলকাতার সাংবাদিকের ফোনেও

এস এন এম আব্দি

ভারতে সাংবাদিকদের ফোনে নজরদারি নিয়ে বিতর্ক চলছে। এই সাংবাদিকদের মধ্যে কলকাতার একজন সাংবাদিকও আছেন—এস এন এম আব্দি। কলকাতার তারকা-সাংবাদিক মহলে, আব্দি বর্তমানে পরিচিত নাম নন, কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা, গোয়েন্দা ও মানবাধিকারসংক্রান্ত সাংবাদিকতায় ভারতে ও ভারতের বাইরে এস এন এম আব্দি একটি বড় নাম।

আব্দি ভারতের একাধিক প্রথম সারির দৈনিক ছাড়াও বাংলাদেশ ও উপসাগরীয় অঞ্চলের সংবাদপত্রে কাজ করেছেন; কখনো সাংবাদিক, কখনো বা সম্পাদক হিসেবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে তিনি একাধিক ‘এক্সক্লুসিভ’ খবরও করেছেন কলকাতার সাবেক পত্রিকা ‘দ্য সানডে’ এবং ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’য় সঙ্গে কাজের সুবাদে। তিনি লেখালেখি করেন বেশ কিছু নিরাপত্তা-উপদেষ্টা সংস্থার ওয়েবসাইটে।
গত রোববার ভারতের সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘দ্য ওয়্যার’ জানায়, ভারতে ৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের ফোনে স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে আড়ি পাতা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাংবাদিক আব্দিও আছেন। আব্দিকে বিষয়টি জানান ‘দ্য ওয়্যার’-এর সম্পাদক সিদ্ধার্থ বরদারাজন।

আব্দিসহ মোট ১০ জন ভারতীয় সাংবাদিকের ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়। যার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে দ্য ওয়্যার।

আব্দি আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফরেনসিক রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী প্রথমে যে সময়ে আমার ফোনে আড়ি পাতার কথা বলা হচ্ছে, সেই সময়ে আমি স্লোভাকিয়ায় একটি নিরাপত্তাবিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। সেটা ছিল ২০১৯-এর জুন মাস। এর তিন মাস পর অক্টোবরে আবার আড়ি পাতা হয়। সেই সময়ে আমি কিছুদিনের জন্য আমেরিকা ও ব্রিটেনে ছিলাম।’

ভারত সরকার অবশ্য ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ একজন সাংবাদিক হিসেবে তাঁর অভিমত, এ ধরনের কাজের বরাত কেন দেওয়া হয়, তা পরিষ্কার। আব্দি বলেন, ‘যিনি বরাত দিচ্ছেন, তিনি জানতে চাইছেন একজন সাংবাদিক বা বিশ্লেষক কার সঙ্গে কথা বলে তাঁর অভিমত তৈরি করছেন। সেই সোর্সকে চিহ্নিত করার চেষ্টাতেই এই কাজ করা হচ্ছে।’ আব্দি একটি উদাহরণও দিলেন, ‘ধরা যাক আমি একটা লেখা লিখলাম, আফগানিস্তানে ভারত কমজোরি নয় বরং যথেষ্ট শক্তিশালী, এই দাবি করে। বললাম, ভারত জানে আফগানিস্তানের কোন দল বা গোষ্ঠী চীন বা পাকিস্তানবিরোধী, যাদের ভারত কাজে লাগাতে পারে।

এবারে এমন কেউ থাকতেই পারেন, যিনি চান না যে এই তথ্য বাইরে যাক। তিনি জানতে চাইবেন, কার সঙ্গে কথা বলে আমি এই তথ্য পেলাম। এর পরে সেই ব্যক্তিকে চাপ দেওয়া হবে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা না বলার জন্য। এটা করার সহজ উপায় হলো ই–মেইলে আড়ি পাতা। আর সেখানে কিছু পাওয়া না গেলে আক্ষরিক অর্থেই হাওয়া থেকে পেড়ে নেওয়া। অর্থাৎ বাতাসের তরঙ্গে কান পাতা। এ কাজ আগেও হতো। স্বরাষ্ট্রসচিবের অনুমতি নিয়েই এ কাজ অতীতে করা হতো। ফলে কোথাও কাগজে একটা প্রমাণ থাকত, ’ বলেন আব্দি।

আব্দি বলেন, এখন সময় পাল্টেছে। এখন হয়তো দেখা যাবে কোনো একটি ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রের ব্যবসায়ী কোনো সংস্থাকে এই কাজের বরাত দিয়েছে। ফলে কোনো সরকারকেই সরাসরি ধরা সম্ভব নয়। আব্দি আরও বলেন, ‘বর্তমানের পেশাদার সাংবাদিকদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে, কেউ তাদের কথা শুনছে বা ফোনে বার্তা পড়ছে। সেভাবে চলাফেরা করতে হবে, সাবধানতাও অবলম্বন করতে হবে। কারণ, কোনো উপায়ই ফোনের উপরে নজরদারি তাঁরা ঠেকাতে পারবেন না।’