পোল্যান্ডের ছাত্রকে ভারত ছাড়ার নোটিশ খারিজ

কলকাতায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী সমাবেশে যোগ দেওয়া যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া পোল্যান্ডের ছাত্রকে ভারত ছাড়ার নোটিশ খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই শিক্ষার্থীকে দেশ ছাড়তে নোটিশ দিয়েছিলেন।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে পোল্যান্ডের ওই ছাত্র কলকাতা হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন। ওই নির্দেশ পুনর্বিবেচনাসহ তাঁকে ভারতে থাকার অনুমতিদানের জন্য আবেদন করেন। সেই মামলার দুই দিনের শুনানির পর ৫ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এক নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেশ ছাড়ার নোটিশের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে ১৮ মার্চ চূড়ান্ত রায় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

গতকাল বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট শুনানি শেষে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশ খারিজ করে দেন। নির্দেশে বলা হয়েছে, কেন ওই ছাত্রকে ভারত ছাড়তে হবে, এর উপযুক্ত কারণ দেখানো হয়নি। এমন কঠোর সিদ্ধান্তের আগে ওই ছাত্রকে তাঁর বক্তব্য পেশের সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল।

পোল্যান্ডের ওই ছাত্রের নাম কামিল শেদচিনস্কি। তাঁকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৫ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নোটিশ দিয়েছিল কলকাতার এফআরআরও বা বৈদেশিক নাগরিক আঞ্চলিক রেজিস্ট্রেশন অফিস। কামিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের ছাত্র। তিনি শুধু বাংলা ভাষায় পারদর্শী নন; ভারতের ৫টি ভাষা শিখেছেন। তিনি পড়াশোনায় ভালো। অনর্গল বাংলা ভাষায় কথা বলেন। কামিল বাংলা ভাষা নিয়ে বিশ্বভারতীতেও পড়ছেন। ২০১৭ সাল থেকে ভিসা নিয়ে ভারতে পড়াশোনা করছেন।

এ বছরের আগস্ট মাসে কামিলের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এর মধ্যেই তাঁর যাদবপুরে পড়াশোনাও শেষ হবে। তিনি শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর আগে সংস্কৃত ভাষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।

কামিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি গত ১৯ ডিসেম্বর কলকাতার শিয়ালদহের কাছে রামলীলা ময়দানে সিএএবিরোধী এক সমাবেশে যোগ দেন। সেখানে তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। সেই সাক্ষাৎকার বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়। সরকার গত ২২ ফেব্রুয়ারি কামিলকে কলকাতার ফরেনার্স রিজওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস বা এফআরআরও অফিসে ডেকে নেন। ওই অফিসের কর্মকর্তারা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাঁর তোলা ছবি জমা দেন কামিল। এরপরই কামিলকে ১৫ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এর আগে সিএএবিরোধী আন্দোলনের একটি ছবি পোস্ট করে দেশ ছাড়ার নোটিশ পেয়েছিলেন বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার এক ছাত্রী আফসারা অনিকা মিম। মিম বিশ্বভারতীর কলা বিভাগের ডিজাইনিংয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কলকাতার এফআরআরও অফিস থেকে তাঁকে ভারত ছাড়ার নোটিশ পাঠানো হয়।

এর আগেও সিএএবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অভিযোগে জার্মান ছাত্র জ্যাকব লিনডেনথালকেও ভারত ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। জ্যাকব চেন্নাইতে আইআইটির ছাত্র। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সিএএবিরোধী মিছিলে হেঁটেছিলেন। এ ছাড়াও আরেক নরওয়ের নারী পর্যটন ভিসা নিয়ে ভারতে ঢুকে সিএএবিরোধী মিছিলে যোগ দেওয়ার কারণে তাঁকেও দেশ ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। ওই নারীর নাম জানি মেট্টি জোহানসন। তিনি নরওয়ে থেকে পর্যটন ভিসা নিয়ে ভারতের কেরালা রাজ্যে এসেছিলেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সে দেশে পড়ার জন্য বিদেশি পড়ুয়াদের কিছু শর্তে ভিসা দেওয়া হয়। ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হয়েছে সংসদে। সেই আইনের বিরোধিতা বা এর প্রতিবাদ করতে পারেন না কোনো বিদেশি। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।