প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট, রাহুলের তোপে মোদি সরকার

রাহুল গান্ধী
ফাইল ছবি

প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কহানির জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি কাঠগড়ায় তুললেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। আজ বুধবার এক টুইটে তিনি বলেন, দশকের পর দশক ধরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কংগ্রেস যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা শেষ করে দিয়েছেন। রাহুল বলেছেন, বন্ধুহীন প্রতিবেশীদের মাঝে বসবাস করা বিপজ্জনক।

সোনিয়া গান্ধীর চিকিৎসার জন্য রাহুল এত দিন বিদেশে ছিলেন। বিদেশে থাকাকালীন বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তের সমালোচনা তিনি করে এসেছেন।

গত মঙ্গলবার দেশে ফিরে এবার সমালোচনায় বিদ্ধ করলেন প্রতিবেশীনীতিকে।

টুইটের সঙ্গে রাহুল জুড়ে দিয়েছেন ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর এক প্রতিবেদন। সেই প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে।

সম্পর্ক ভালো হচ্ছে চীনের সঙ্গে। প্রতিবেদনের শুরুতেই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন ভারতীয় সংস্থাকে হারিয়ে চীনা সংস্থার ২৫ কোটি ডলারের সিলেট বিমানবন্দর তৈরির কাজ পাওয়া। জুন মাসে বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ রপ্তানিতে চীনের শুল্কহীন ঘোষণা করার উদাহরণ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। তৃতীয় উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ১০০ কোটি ডলারের তিস্তা অববাহিকা ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের চীনা প্রস্তাব।

মোদি সরকারকে আক্রমণের হাতিয়ার হিসেবে রাহুল ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর ওই প্রতিবেদন জুড়ে দিয়েছেন। বলেছেন, দশকের পর দশক ধরে ভারত তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্কের এক বাতাবরণ ধীরে ধীরে তৈরি করে এসেছে। সম্পর্ক লালন করে এসেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন হয়ে মোদি সেই সম্পর্ক ধ্বংস করে দিয়েছেন।

ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে কিছুদিন ধরে দুই দেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। দুই দেশেই সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে যেমন আলোচনা চলছে, তেমনই জল্পনায় উঠে এসেছে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি এবং চীনের হাত ধরে পাকিস্তানের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা। এই জল্পনার মাঝেই ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আচমকাই বাংলাদেশ সফর করেন।

করোনাকালের যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। দুই দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে অবশ্য বারবার বলেছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘সোনালি অধ্যায়ের’ কথা। সম্পর্কহানির আশঙ্কা দুই দেশই উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু তবুও জল্পনা অব্যাহত।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এই টানাপোড়েন আরও একবার প্রকট হয়েছে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে। আচমকা এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যায়। সৃষ্টি হয় সামাজিক ও রাজনৈতিক অসন্তোষ। অবস্থা সামাল দিতে আসরে নামে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সীমান্তে আটকে পড়া ট্রাকগুলোর যাওয়ার অনুমতি তারা আদায় করে।

গত বছরও আচমকা ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমের একাংশে সম্পর্কহানি বহু আলোচিত। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কহানির সুযোগে চীনের সাহায্য নিয়ে পাকিস্তানের সক্রিয় হওয়ার খবরও আলোচনায় উঠে এসেছে। সরকারিভাবে ভারত ও বাংলাদেশ কেউই এই জল্পনাকে প্রশ্রয় দিতে রাজি নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর প্রতিবেদন ও রাহুল গান্ধীর টুইটে তার উল্লেখ সম্পর্কহানির সেই জল্পনাকে নতুন করে উসকে দিল।