‘ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ সত্য হলে তা গুরুতর বিষয়’

পেগাসাস প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফোনে আড়ি পাতার তদন্তের দাবিতে করা বিভিন্ন মামলার প্রথম শুনানি ছিল গতকাল। পরবর্তী শুনানি মঙ্গলবার।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
ফাইল ছবি

পেগাসাস-কাণ্ডের অভিযোগ সত্য হলে তা নিঃসন্দেহে গুরুতর বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। নজরদারি–সংক্রান্ত এই মামলার প্রথম শুনানির দিন গতকাল বৃহস্পতিবার এই মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা বলেন, ‘সত্য কী, তা জানা প্রয়োজন। আমরা এখনো জানি না কার কার নাম আছে।’

ইসরায়েলি সংস্থা এনএসওর তৈরি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারতের সাংবাদিক, রাজনীতিক, মানবাধিকারকর্মীসহ অনেকের ফোনে আড়ি
পাতার তদন্তের দাবিতে করা বিভিন্ন মামলার প্রথম শুনানি ছিল গতকাল। এই মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবীদের বলা হয় তাঁদের আবেদনের কপি সরকারকে পাঠাতে। প্রধান বিচারপতি এই নির্দেশ দিয়ে বলেন, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী মঙ্গলবার। এডিটরস গিল্ড এই মামলার অন্যতম আবেদনকারী। সিপিএমের রাজ্যসভা সদস্য জন ব্রিটাসও। এই মামলার অন্যতম আরও দুই আবেদনকারী সাংবাদিক এন রাম ও শশী কুমার।

প্রধান বিচারপতি রমনা ও বিচারপতি সূর্যকান্তর এজলাসে শুনানির শুরুতেই এন রাম ও শশী কুমারের আইনজীবী কংগ্রেস নেতা কপিল সিবাল বলেন, পেগাসাস এমন এক প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে সবার অলক্ষ্যে ব্যক্তিগত জীবনে প্রবেশ করে অনধিকার চর্চা করা হচ্ছে।

শোনা যাচ্ছে একটা ফোনে এই প্রযুক্তি ঢোকাতে খরচ লাগে ৫৫ হাজার ডলার! তা হলে প্রশ্ন, এই প্রযুক্তি কে কিনেছে?
কপিল সিবাল, আইনজীবী

প্রধান বিচারপতি রমনা এই সময় বলেন, অভিযোগ সত্য হলে নিঃসন্দেহে তা গুরুতর বিষয়। কিন্তু দুটি বিষয় জানার রয়েছে। প্রথমত, যাঁদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে, তাঁরা পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেননি কেন? দ্বিতীয়ত, ২০১৯ সালেও এই অভিযোগ উঠেছিল, অথচ এখন কেন আবেদন জানানো হচ্ছে? তিনি আরও বলেন, আবেদন যা করা হয়েছে, সবই খবরের কাগজের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে। আবেদনকারীরা প্রথিতযশা সাংবাদিক ও আন্দোলনকর্মী, তাঁরা আরও যাচাইযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন।

জবাবে আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, পেগাসাস প্রযুক্তি কতটা বিপজ্জনক, সেই চরিত্র বোঝা গেছে পরীক্ষাগারের রিপোর্ট পাওয়ার পর। যেহেতু এই প্রযুক্তি শুধু সরকার ও সরকারি সংস্থার কাছেই বিক্রি করা হয়েছে, কাজেই ব্যক্তিগতভাবে কারও কিছু জানার উপায় ছিল না। তিনি আরও বলেন, ‘আমার প্রশ্ন একটাই। সরকার যদি জানত যে এইভাবে আড়ি পাতা হচ্ছে, তা হলে কেন এনএসওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি? এটা তো নাগরিক অধিকারের প্রশ্ন। শোনা যাচ্ছে একটা ফোনে এই প্রযুক্তি ঢোকাতে খরচ লাগে ৫৫ হাজার ডলার! তা হলে প্রশ্ন, এই প্রযুক্তি কে কিনেছে?’

বিভিন্ন দেশের ১৬টি প্রথম সারির সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম যৌথভাবে এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত। ভারত থেকে ছিল ‘দ্য ওয়্যার’ নিউজ পোর্টাল। গত বুধবার তারা জানায়, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্রর ব্যবহার করা একটি পুরোনো ফোন নম্বর, সুপ্রিম কোর্টের দুই কর্মকর্তা এবং তিনজন আইনজীবীর ফোনও নজরদারির ওই তালিকায় ছিল।

সুপ্রিম কোর্টের এই শুনানির আগের দিনই কংগ্রেসসহ ভারতের ১৪টি বিরোধী দল পেগাসাস-কাণ্ড নিয়ে পার্লামেন্টের দুই কক্ষে বিস্তারিত বিতর্কের দাবি জানায়। তবে আলোচনার দাবিতে সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশন বারবার মুলতবি হয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের ৬ রাজ্যসভা সদস্যকে বুধবার এক দিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকালও রাজ্যসভা অচল থাকে। গোলমালে রাজ্যসভার কক্ষে ঢোকার দরজার একটি কাচ ভেঙে যায়। সংসদের অচলাবস্থার জন্য সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষ একে অন্যকে দোষারোপ করছে।