বাঘের গলায় রেডিও কলার

পশ্চিমবঙ্গে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গতিবিধি জানতে বাঘের গলায় রেডিও কলার পরানো হয়েছে
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গতিবিধি জানতে বাঘের গলায় রেডিও কলার পরানো হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হরিখালি বিটের হরিণভাঙ্গা জঙ্গলে সাত বছর বয়সী একটি পুরুষ বাঘের গলায় এই রেডিও কলার পরানো হয়। রেডিও কলারের সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রযুক্তির মাধ্যমে ওই বাঘের গতিবিধি জানতে পারবে বন দপ্তর।

সম্প্রতি সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ধরতে ধাওয়া কয়েকজন মৎস্যজীবী অতর্কিতভাবে বাঘের মুখে পড়েন। কারও কারও প্রাণও যায়। এরপর সুন্দরবনের বাঘের গতিবিধি জানতে বাঘের গলায় রেডিও কলার পরানোর উদ্যোগ নেয় ভারতের বন দপ্তর। সেই লক্ষ্যে কয়েক দিন আগে হরিখালী জঙ্গলে লোহার খাঁচায় একটি ছাগল রেখে বাঘ ধরার ফাঁদ পাতে বন দপ্তর। গত শনিবার রাতে সেই খাঁচায় একটি পুরুষ রয়েল বেঙ্গল টাইগার আটকা পড়ে।

খবর পেয়ে রোববারই ওই এলাকায় যান পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বন অধিকর্তা বিনোদ কুমার যাদব। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড কর্মকর্তা তাপস দাশ ও উপ–অধিকর্তা দীপক রেড্ডি। তাঁরা ফাঁদে আটকা বাঘটিকে অজ্ঞান করে রেডিও কলার পরান। এরপর বাঘটিকে ৫ কেজি মুরগির মাংস খাইয়ে হরিখালী জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। বন দপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, এই রেডিও কলারটি সরবরাহ করেছে ভারতের বন দপ্তর ও ডব্লিউডব্লিউএফ ইন্ডিয়া। পর্যায়ক্রমে এমন আরও কয়েকটি রেডিও কলার বসানো হবে সুন্দরবনের বাঘের গলায়।

বন কর্মকর্তারা জানান, আমেরিকার প্রযুক্তিতে তৈরি এই রেডিও কলার দুই থেকে তিন বছর কার্যকর থাকবে বলা হলেও এই সুন্দরবনের নোনা পানির কারণে এটি দেড় বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে।

এর আগে ২০০৭ থেকে ২০০৮ ও ২০১৬ সালে একাধিক বাঘকে এই রেডিও কলার পরানো হয়েছিল। কিন্তু সুন্দরবনের নোনা পানির কারণে সেটি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বাঘেরা নদী ও খালবিলে সাঁতার কাটার কারণে তা নষ্ট হয়ে যায়।

গতকাল লাগানো রেডিও কলার বাঘের প্রতি ঘণ্টার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিতে পারবে। বাঘ কোন জঙ্গলে থাকতে ভালোবাসে, কতক্ষণ ঘোরাফেরা করে, কতক্ষণ সাঁতার কেটে নদী পার হয়—এসব জানা সম্ভব হবে। বাঘের গলায় বাঁধা রেডিও কলারটি সরাসরি উপগ্রহের মাধ্যমে বন দপ্তরের কাছে সংকেত পাঠাবে। এর ফলে বন দপ্তরও ওই বাঘটির গতিবিধি এবং আচরণ সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে।

এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনে সম্প্রতি বাঘ গণনা শুরু হয়েছে। বাঘ গণনার কাজে একেকটি দলে ১২ জন করে ১০টি দল নিয়োগ করা হয়েছে।

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধিকর্তা তাপস দাস বলেন, বাঘ গণনার জন্য সুন্দরবনের ৫৮২টি জায়গায় ১ হাজার ১৬৪টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এর জন্য ৪০০টি ক্যামেরা দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার ইন্ডিয়া (ডব্লিউডব্লিউএফ)। তিনি বলেন, জঙ্গলে ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের যে ছবি পাওয়া যাবে, তা উত্তরাখন্ড রাজ্যের রাজধানী দেরাদুনে পাঠিয়ে বিশ্লেষণ করে বাঘের সঠিক পরিসংখ্যান মিলবে। চার বছর অন্তর বাঘ গণনার কাজ হয়। মূলত শীতকালে সুন্দরবনের আবহাওয়া বাঘ গণনার জন্য অনুকূল থাকে। তাই ডিসেম্বর মাসে শুরু করা হয় বাঘ গণনার কাজ। সর্বশেষ গণনায় সুন্দরবনে ৯৬টি বাঘ মিলেছিল।

বন দপ্তরের কর্মকর্তারা আশা করছেন, এবার এই গণনায় বাঘের সংখ্যা বাড়বে।

শীতকালে নদীতে জোয়ারের সময় জলের পরিমাণ কম থাকে। এ ছাড়া ওই সময় নোনা জল ঢুকে ক্যামেরাও নষ্ট করতে পারে না। তাই বাঘ গণনার জন্য শীতকালকে বেছে নেওয়া হয়। যদিও এবার গাছের গোড়ায় ক্যামেরা লাগানোর পাশাপাশি ড্রোন ও জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে গণনার কাজ করা হবে।