বাজারে আসছে রয়্যাল এনফিল্ডের ইলেকট্রিক বাইক

রয়্যাল এনফিল্ডের মোটরসাইকেল
ছবি: টুইটার

পেট্রল-ডিজেল-অকটেনের দামের কারণে মানুষ বেশি করে ঝুঁকছে ব্যাটারিচালিত গাড়ি বা মোটরসাইকেলের দিকে। দিন দিন তাই বাড়ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতি মানুষের ঝোঁক। তাই মানুষের চাহিদা আর ঝোঁকের কথা মাথায় রেখে ভারতে ইলেকট্রিক বাইক আনছে রয়্যাল এনফিল্ড। সম্প্রতি বিলাসবহুল মোটরসাইকেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে। এই বাইক ১ চার্জে ১০০ কিলোমিটার চলবে।
দুই চাকার মোটরযানের প্রতি মানুষে দুর্বলতা বরাবরই অসীম। দ্রুতগতি, নজরকাড়া ডিজাইন আর যেকোনো রাস্তায় চালানোর সুবিধা ও গাড়ির চেয়ে দাম কমের কারণে ধনী-গরিব সবার কাছেই চলাচলের অন্যতম মাধ্যম বিবেচিত হয়ে আসছে বাইক। নজরকাড়া ডিজাইন আর আভিজাত্যের কারণে সহজেই নজর কাড়ে রয়্যাল এনফিল্ডের বাইকগুলো। এবার সেই ব্রান্ডই বাজারে আনছে ইলেকট্রিক বাইক।

রয়্যাল এনফিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিনোদ কে দাশারি সম্প্রতি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, রয়্যাল এনফিল্ড ইলেকট্রিক বাইকের নকশা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি বা বাইক নিয়ে সংস্থাটি বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিল। নকশা তৈরির পর পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে এই ইলেকট্রিক বাইকের বিভিন্ন বিভাগ নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু করে রয়্যাল এনফিল্ড।
ব্রিটেনে সংস্থার প্রযুক্তি কেন্দ্রটি নতুন পণ্যের বিকাশের কাজ করে যাচ্ছে। এখন সেটি ঢেলে সাজানো হচ্ছে। ওই প্রযুক্তি কেন্দ্রে বর্তমান মডেলকে বৈদ্যুতিক পাওয়ার ট্রেন দিয়ে ইলেকট্রিক বাইক হিসেবে চালানোর জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। থাইল্যান্ডে এই বছরের শুরুর দিকেই সংস্থার প্রথম ‘অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট’ তৈরি করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, বছরখানেকের মধ্যেই বাজারে চলে আসবে রয়্যাল এনফিল্ডের নতুন ইলেকট্রিক বাইক।

রয়্যাল এনফিল্ডের বাইক
ছবি: টুইটার

রয়্যাল এনফিল্ডের বর্তমান প্রজন্মের কথা বিবেচনা করেই নতুন ইলেকট্রিক বাইক আনতে যাচ্ছে। জ্বালানি সাশ্রয়ী ২৫০ সিসির এ বাইক শিগগিরই বাজারে আসছে।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, যদি রয়্যাল এনফিল্ড ইলেকট্রিক মোটর বাইক বাজারে আসে, তবে তা বাজারে সাড়া ফেলবে। কারণ এই ব্র্যান্ডের মোটর বাইকের প্রতি মানুষের আগ্রহ সব সময় শীর্ষে। প্রচুর ফ্যান আছে এই মোটরসাইকেলের। নতুন বাইক বাজারে এলেই সাড়া পড়ে। বাইকটি ২০২২ সালের আগে বাজারে আসছে না। বাজারে এলে এই বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলের দাম ২ লাখ রুপির মতো হবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকেরা। তবে মোটরসাইকেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ইলেকট্রিক বাইকের দামের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।

ইংল্যান্ডে যাত্রা শুরু হলেও এ কোম্পানি জনপ্রিয়তা ও বিক্রি বাড়ে ভারতে আসার পর। ১৮৯৬ সালে এডি মিডলসেক্সের এনফিল্ড শহরে রয়্যাল স্মল আর্মস ফ্যাক্টরির জন্য যন্ত্রপাতি তৈরির কন্ট্রাক্ট পায় এবং এখান থেকেই রয়্যাল এনফিল্ড নামের জন্ম। এ বছরই তারা নিউ এনফিল্ড সাইকেল কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি কিনে নেয় এবং এখান থেকে ১৮৯৭ সালে সাইকেলের সব ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি শুরু করে। ধীরে ধীরে যখন মোটরচালিত সাইকেল ইংল্যান্ডে জনপ্রিয় হয়, তখন এনফিল্ড কোম্পানিও মোটরসাইকেল তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। দুই বছর চেষ্টার পর এনফিল্ড ১৯০১ সালে তাদের প্রথম ২৩৯ সিসি মোটর বাইক বাজারে আনে।

রয়্যাল এনফিল্ডের মোটরসাইকেল
ছবি: টুইটার

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার রয়্যাল এনফিল্ডের সঙ্গে চুক্তি করে। এবার এই কোম্পানি মিলিটারি গ্রেড মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে। এ সময় তারা ২৫০ সিসি, ৩৫০ সিসি এবং ৫৭০ সিসি ইঞ্জিনের মোটরসাইকেল তৈরি করে। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল রয়্যাল এনফিল্ড ডব্লিউডি/আরই (WD/RE)। এটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল প্লেন থেকে প্যারাসুটের মাধ্যমে নিচে ফেলার জন্য। যুদ্ধের সময় বোমারু বিমানের হাত থেকে বাঁচার জন্য ওয়েস্টউডে একটি ভূগর্ভস্থ কারখানা নির্মাণ করা হয়েছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ১৯৪৬-৫৪ সালে রয়্যাল এনফিল্ড নতুন নতুন বাইকের নকশা বাজারে আনে। এ বিখ্যাত মডেল ‘বুলেট’ বাজারে ছাড়ে এনফিল্ড। বুলেট ৩৫০ সিসি এবং ৫০০ সিসি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে খুব অল্প সময়েই। এরপর আসে রয়্যাল এনফিল্ড সুপার মিটিয়র এবং সুপার মিটিয়র কন্সটেলেশন। এগুলো ছিল ৭০০ সিসির বাইক।

রয়্যাল এনফিল্ডের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় আসলে ভারতে। ১৯৪৯ সাল থেকে ভারতে রয়্যাল এনফিল্ড বাইক বিক্রি শুরু হয়। ব্যবসার সুবিধার্থে ১৯৫৫ সালে রেড্ডিচ কোম্পানি এবং মাদ্রাজ মোটরস একসঙ্গে এনফিল্ড ইন্ডিয়া গঠন করে। প্রথমদিকে শুধু মোটরবাইক অ্যাসেম্বলিং করা হতো ভারতে। তবে ১৯৬২ পর থেকে ভারতেই তৈরি হয় রয়্যাল এনফিল্ড। এরপর আর রয়্যাল এনফিল্ড ইন্ডিয়াকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

বর্তমানে সারা বিশ্বে ৫০টির বেশি দেশে বাইক বিক্রি করছে এনফিল্ড। ভারতের স্বাধীনতার পর থেকেই বাইকটি বিক্রি হয়ে আসছে। ভারতীয়রা রয়্যাল এনফিল্ডকে নিজস্ব পণ্য মনে করে।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস