বাড়ি বন্ধক রেখে, মায়ের গয়না বেচে সারদার অর্থ ফিরিয়েছি: কুণাল

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ।
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষুদ্র ঋণদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান সারদা থেকে নেওয়া ২ কোটি ৬৮ লাখ রুপি ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডির (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) হাতে অবশেষে ফিরিয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাবেক সাংসদ ও দলটির এই রাজ্য শাখার মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিমান্ড ড্রাফটের (ডিডি) মাধ্যমে তিনি এই অর্থ ফিরিয়ে দেন। এদিকে কারাগারে থাকাকালীন কুণাল ঘোষের আত্মহত্যার চেষ্টাসংক্রান্ত মামলার শুনানি গতকাল শুরু হয়েছে।

কুণাল বলেছেন,  তাঁর এই অর্থ জোগাড় করতে খুব কষ্ট হয়েছে। মামলা-মোকদ্দমায় খরচ হয়েছে অনেক অর্থ। তাই বসতবাড়ি বন্ধক রেখে, মায়ের গয়না বেচে আর অন্যদের কাছ থেকে ধারদেনা করে তিনি সারদার কাছ থেকে নেওয়া পারিশ্রমিক, বিজ্ঞাপন ও  চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য নেওয়া সমুদয় অর্থ ফিরিয়ে দিয়েছেন।

২০১৩ সালে কলকাতায় ফাঁস হয় সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা। কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা, সাংসদ, বিধায়ক ও মন্ত্রী। ১৪ হাজার কোটি রুপির ওই আর্থিক কেলেঙ্কারিতে উঠে আসে রাজ্যসভার তৎকালীন সদস্য কুণাল ঘোষ, রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী মদন মিত্র, সাংবাদিক ও সাংসদ সৃঞ্জয় বসু, রাজ্য পুলিশের সাবেক ডিজি রজত মজুমদার, বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ দেবব্রত সরকারসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম।

হাজার হাজার কোটি রুপি নয়ছয়ের ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হন ১৭ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। এ-সংক্রান্ত মামলায় ফেঁসে যান সাংসদ কুণাল ঘোষও। বিশাল অঙ্কের এই আর্থিক কেলেঙ্কারির খবর ফাঁস হওয়ার পর ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে যান। তখন ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইকে ১৮ পাতার একটি চিঠি লিখে যান তিনি। তাতে বলেন, তাঁর বিরাট আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডোবানোর পেছনে আছেন ২২ জন। ওই ২২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁর আবেদনকে যেন এফআইআর হিসেবে গণ্য করা হয়।

সুদীপ্ত সেন আরও লেখেন, বারবার চাপ তৈরি করে তাঁর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই ব্যক্তিরা। তাঁর এ অভিযোগের পর গ্রেপ্তার হন কুণাল ঘোষ, সৃঞ্জয় বসু, মদন মিত্রসহ বেশ কয়েকজন।

কুণাল ঘোষ ছিলেন সারদার মিডিয়া সেলপ্রধান। কলকাতা ও আসামের ছয়টি বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ও উর্দু দৈনিক এবং তারা টিভিসহ সারদার ১০টি সংবাদমাধ্যমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও ছিলেন তিনি। এখান থেকে তিনি নিয়মিত বেতনসহ নানা আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। কুণাল ঘোষ ৩৪ মাস কারাবন্দী থেকে ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর জামিনে মুক্তি পান। জামিন পান মদন মিত্র, সৃঞ্জয় বসুরাও। ২০১৩ সালে কুণাল ঘোষকে বহিষ্কার করে তৃণমূল।

কিছুদিন রাজনীতি থেকে দূরে থাকার পর কুণাল ফের তৃণমূলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। হয়ে যান তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র। এখন তিনিই রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে দলের কথা বলেন। সম্প্রতি তাঁকে সারদা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে ইডি।

সারদা কেলেঙ্কারিতে বলিউড তারকা ও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তীর নাম উঠলে তিনিও ইডির হাতে ২০১৫ সালের ১৬ জুন তুলে দিয়েছিলেন তাঁর পারিশ্রমিক হিসেবে নেওয়া ১ কোটি ১৯ লাখ রুপি। এরপর মিঠুন ছেড়ে দেন তৃণমূলের রাজনীতি ও রাজ্যসভার সাংসদ পদ। দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে থেকে এ মাসের ৭ তারিখে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি।

এদিকে গতকাল থেকে কুণাল ঘোষের আত্মহত্যা চেষ্টাসংক্রান্ত মামলার শুনানি কলকাতায় সাংসদ ও বিধায়কদের বিচারের জন্য গড়া বিশেষ আদালতে শুরু হয়েছে। বিচারক মোহনজ্যোতি ভট্টাচার্যের এজলাসে শুরু হয়েছে এই শুনানি। ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর কুণাল ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে।