বিচ্ছিন্ন সংঘাত–অনিয়মের অভিযোগ

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের সপ্তম দফায় সোমবার ভোট হয়েছে পাঁচ জেলার ৩৪ আসনে। এদিন ভবানীপুরের একটি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতে করোনা–আতঙ্কের মধ্যেই সোমবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের সপ্তম দফার ভোট হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ভোট ঘিরে সংঘর্ষ, ভোটারদের বাধা, জাল ভোট দেওয়া এবং এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে। তবে সংঘর্ষে প্রাণহানির কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪ আসনে এবার আট দফায় ভোট হচ্ছে। সোমবার রাজ্যের পাঁচটি জেলার ৩৪টি আসনে ভোট হয়। আগামী ২৯ এপ্রিল অষ্টম বা শেষ দফার ভোট হবে রাজ্যের চার জেলার ৩৫টি আসনে। আগামী ২ মে একযোগে এই আট দফা ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

সোমবারের ভোটে ৩৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ২৬৮ জন প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন চারজন বিদায়ী মন্ত্রী। তাঁরা হলেন বিদায়ী পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ও আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। আরও ছিলেন দুই চিত্রতারকা সায়নী ঘোষ ও রুদ্রনীল ঘোষ। ছিলেন প্রখ্যাত পোশাক পরিকল্পক ও বিজেপির নারী মোর্চার রাজ্য সভাপতি অগ্নিমিত্রা পাল, অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ী, দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ঐশী ঘোষ। ঐশী ঘোষ লড়ছেন সিপিএমের টিকিটে পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়া আসন থেকে। তাঁর বাড়ি বর্ধমানের দুর্গাপুরে।

করোনা আবহের মধ্যেই সকাল সাতটা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়। ভোট নেওয়া হয় ১১ হাজার ৩৬৭টি ভোটকেন্দ্রে। ভোটার ছিলেন ৮১ লাখ ৮৭ হাজার ১৯ জন।

ভোট গ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে ৩৪টি নির্বাচনী এলাকার ভোটকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। সব ভোটকেন্দ্র এলাকায় ৬২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছিল। আর রাজ্য পুলিশ থেকে নিয়োগ করা হয়েছিল ২৫ হাজার ৩৩৮ জন পুলিশ।

এর মধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। আসানসোল দক্ষিণ আসনে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের সঙ্গে পুলিশের বচসা হয়। সায়নী ঘোষ একদল সমর্থক নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। মুর্শিদাবাদের সুতিতে একই গ্রামের তিনজন ভোটার কার্ড নিয়ে ভোট দিতে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁরা ‘মৃত’। ভোট আর দিতে পারেননি তাঁরা। মুর্শিদাবাদের রানীনগরে তৃণমূলের দুই কর্মীর বাড়িঘর ভাঙচুর করার অভিযোগ এসেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। এতে এক তৃণমূলকর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কলকাতার রাসবিহারী আসনের বিজেপির প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্রে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। বর্ধমানের দুর্গাপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যাম্প অফিস ভাঙার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মুর্শিদাবাদের রানীনগরে কংগ্রেস-তৃণমূলের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক বোমাবাজি হয়েছে।

দুর্গাপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর করা হয়। এতে হাত–পা ভাঙে এক তৃণমূলকর্মীর। মুর্শিদাবাদের রানীনগরে বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। গঙ্গারামপুরে বিজেপির এজেন্টকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ এসেছে। হরিরামপুরে বেহাল রাস্তা মেরামত করার দাবি তুলে এলাকার ভোটাররা ভোট বর্জন করেছেন। নানুর ও রতুয়ায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এই বিস্ফোরণে কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া কলকাতাসহ অন্যান্য স্থানে ভোট ঘিরে সংঘর্ষ, ভোটে বাধা দান, জোর করে জাল ভোট দেওয়া এবং এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে।

মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিকেলে হুইলচেয়ারে চড়ে ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউট (বয়েজ) কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেননি রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে তাঁর সহধর্মিণী ও একমাত্র মেয়ে এদিন ভোট দিয়েছেন।

তৃণমূলের তারকা প্রার্থীদের মধ্যে আছেন রাজ্যের বিদায়ী পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি (বালিগঞ্জ), পৌর মন্ত্রী ও কলকাতার সাবেক মেয়র ফিরহাদ হাকিম (কলকাতা বন্দর), বিদায়ী বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (ভবানীপুর), বিদায়ী আইন ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক (আসানসোল উত্তর), কলকাতা পৌর করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মেয়র পরিষদ দেবাশীষ কুমার (রাসবিহারী), আসানসোলের সাবেক মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় (রানীগঞ্জ), এই দফার প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে সম্পদশালী মুর্শিদাবাদের জাকির হোসেন (জঙ্গীপুর) এবং অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ (আসানসোল দক্ষিণ)।

বিজেপির প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ী (বালুরঘাট), সাবেক ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান সুব্রত সাহা (রাসবিহারী), আসানসোল পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারী (পান্ডবেশ্বর), পোশাক পরিকল্পক অগ্নিমিত্রা পাল (আসানসোল দক্ষিণ) এবং অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ (ভবানীপুর)।

আর বাম দল সিপিএমের প্রার্থীদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের ছেলে চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম (বালিগঞ্জ) এবং দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ঐশী ঘোষ (জামুড়িয়া) রয়েছেন।