বিজেপির বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হওয়ার ডাক মমতার

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সোনিয়া গান্ধী
রয়টার্স ফাইল ছবি

কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় জোট গড়ার কাজে এক পা এগিয়ে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিকেলে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠকের পর মমতা বলেন, আলোচনা খুবই সদর্থক হয়েছে। এবার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের জোটবদ্ধ হওয়ার প্রশ্নে দ্বিমত না থাকলেও সেই জোটের মুখ কে হবেন, কে দেবেন নেতৃত্ব—সেই প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত। তৃণমূল কংগ্রেসের সবাই সেই ভূমিকায় মমতাকে দেখতে আগ্রহী।

দলীয় সাংসদেরা সেই আগ্রহ প্রকাশও করে দিয়েছেন। দলীয় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকের পর তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দেন, ‘মমতাকেই আমরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। তিনিই বিরোধী শিবিরের প্রধান মুখ।’

কিন্তু তা সত্ত্বেও মমতা নিজে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি। সোনিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যম সেই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘বিজেপিকে হারাতে হলে সবাইকে এক জোট হয়ে লড়তে হবে। আমি একা কিছু করতে পারব না।’ তিনি বলেন, ‘আমি লিডার নই, ক্যাডার। আমি স্ট্রিট ফাইটার।’

মুখে এ কথা বললেও তিনি যে রাজ্য ছেড়ে এবার কেন্দ্রের প্রতি নজর দিচ্ছেন, এবারের দিল্লি সফরের আগে থেকেই মমতার ঘনিষ্ঠ মহল তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। দিল্লি সফরের আগে থেকেই এই বিষয়ে দলীয় নেতারা সরব। পশ্চিমবঙ্গের ভোটে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করার পর মমতার ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল। ২১ জুলাইয়ের সম্মেলন বিভিন্ন রাজ্যে ‘ভার্চ্যুয়ালি লাইভ’ দেখানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সেই ভাষণ তিনি বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে দিয়েছেন। দিল্লিতে সেই উপলক্ষে শারদ পাওয়ার, চিদাম্বরমসহ বিভিন্ন বিরোধী নেতাকে এক জোট করেছেন। বৈঠকও হয়েছে।

কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কোনো জোটই পূর্ণতা পেতে পারে না। সেই কারণে সোনিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করেন। তবে সেই বৈঠকের আগে দলীয় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমকে তিনি নেতৃত্ব সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি জ্যোতিষী নই। সবকিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতি কোন দিকে এগোয়, তার ওপর।’

সোনিয়ার সঙ্গে তাঁর যে বিরোধী ঐক্য নিয়ে কথা হয়েছে, মমতা তা গোপন করেননি। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোনিয়াজি চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গিয়েছিলাম। রাহুলজিও ছিলেন। দেশের রাজনীতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিজেপিবিরোধী ঐক্য নিয়ে কথা হয়েছে। পেগাসাস-কাণ্ড ও কোভিড নিয়েও কথা হয়েছে। আশা করি ভবিষ্যতে ইতিবাচক ফল আসবে।’

পেগাসাস নিয়ে কংগ্রেসের ডাকা এক সর্বদলীয় সভায় তৃণমূলের কারও না যাওয়া নিয়ে নানান জল্পনা শুরু হয়। সেই বৈঠকে রাহুল নিজে বড় একটা ভূমিকা নেন। বৈঠকে যোগ দেন ১৪টি বিরোধী দলের নেতারা। রাহুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংসদ অচল করার দায় বিরোধীদের ওপর চাপাতে চাইছে সরকার। অথচ আমাদের দাবি সামান্য। পেগাসাস নিয়ে আলোচনা হোক। সরকার শুধু বলুক, পেগাসাস প্রযুক্তি তারা কিনেছে কি না এবং তার মাধ্যমে ভারতবাসীর ওপর নজরদারি চালানো হয়েছে কি না।’

রাহুল বলেন, এই প্রশ্নই সরকার এড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের ফোনে একটা অস্ত্র ঢুকিয়েছেন। অথচ তা স্বীকার করতে চাইছেন না। তাই সংসদীয় বিতর্ক এড়াতে চাইছেন।’ সেই বৈঠকে তৃণমূল কেন গরহাজির ছিল জানতে চাওয়া হলে তৃণমূল নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ওটা আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা ছিল না। হুট করে ডাকা। আমরা জানতেও পারিনি।’ ঘটনা হলো, কংগ্রেসের উদ্যোগে ওই বৈঠকে যাওয়ার আগে তৃণমূল সাংসদেরা মমতা-সোনিয়া বৈঠকের ফল সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন।

সোনিয়া-রাহুলের সঙ্গে বৈঠকের পর এখন মনে করা হচ্ছে, সংসদে এই বিষয়ে কংগ্রেস-তৃণমূলে আর কোনো দূরত্ব থাকবে না। পেগাসাসের তদন্তে মমতা ইতিমধ্যে কমিশন গঠন করেছেন। বিরোধী রাজ্য নেতাদেরও তা করতে বলেছেন। গতকাল তিনিও প্রশ্ন তোলেন, পেগাসাস নিয়ে সরকার কেন জবাব দিচ্ছে না? কেন চুপ করে রয়েছে? আলোচনা তো সংসদেই হতে হবে, চায়ের দোকানে নয়। কিছু না করে থাকলে সরকার তার স্পষ্ট জবাব দিক। চুপ করে বিরোধীদের দোষী করছে কেন?

দিল্লি সফরের তৃতীয় দিনে বিরোধী ঐক্যের জন্য সচেষ্ট মমতা জোটের মুখ কে হবেন, তা অস্পষ্টই রাখলেন। ধোঁয়াশা রাখলেন এই প্রশ্নে তাঁর নিজের ভূমিকাকেও। সংবাদমাধ্যমকে তাঁর সাফ কথা, ‘নেতৃত্বের বিষয় নিয়ে যখন আলোচনা হবে, তখনই আমরা ঠিক করব। আমি একজন সাধারণ কর্মী। সেভাবেই থাকব। নিজে থেকে কিছু চাইব না।’ তিনি বলেন, চাওয়া একটাই, ‘আচ্ছে দিনের বদলে সাচ্চে দিন আসুক।’