বিনা প্ররোচনায় গুলি শীতলকুচিতে, দাবি সংবাদমাধ্যমের

এবারের নির্বাচনে অন্যান্য অনেক ঘটনার মতো কুচবিহারের শীতলকুচির ঘটনা এখনো পেছনের দিকে চলে যায়নি বরং মাঝেমধ্যেই তা ফিরে আসছে। আজ বুধবার একটি জাতীয় স্তরের ওয়েবসাইট ‘নিউজলন্ড্রি’ দাবি করেছে, শীতলকুচিতে গত চতুর্থ দফার নির্বাচনে বিনা প্ররোচনায় গুলি চালানো হয়েছিল। যদিও কেন্দ্রীয় বাহিনী এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনসহ অন্য নেতারা খবরটি  টুইট করেছেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শীতলকুচিতে নিহত লোকজনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। অন্যদিকে রাহুল গান্ধী আজ উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরে কংগ্রেস-বাম দল ও ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের সংযুক্ত মোর্চার এক জনসভায় ভাষণ দেন। তাঁর ভাষণে তিনি মূলত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামগ্রিক ব্যর্থতার বিষয়টিই বারবার তুলে ধরেন।

ইংরেজি ভাষার ওয়েবসাইট ‘নিউজলন্ড্রি’ কিছু তথ্য দিয়ে জানিয়েছে, শীতলকুচির জোরপাটকি গ্রামের বুথে ১০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বাহিনী কোনো বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর গুলি চালায়নি। তারা গুলি চালিয়েছিল ভোটারদের একটি লাইনে। সেই লাইনে কোনো গন্ডগোল হয়নি। পাঁচজন প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত লোকজনের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেছেন, সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ফোর্স (সিআইএসএফ) নামের কেন্দ্রীয় বাহিনী ১২৬ নম্বর বুথের লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের ওপরে কোনো কারণ ছাড়াই গুলি চালায়। সিআইএসএফকে কেউ আক্রমণ করেনি, যেমনটা প্রচারমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে।

নিউজলন্ড্রির অনুসন্ধান বলছে, সকাল ৯টা নাগাদ কেন্দ্রীয় বাহিনী একটি স্থানীয় ছেলেকে অকারণে মারধর করায় অঞ্চলের মানুষজন খেপে গিয়ে বাহিনীকে ঘিরে ধরে। কিন্তু ঘটনাটি মিটে যায়। ছেলেটিকে মাথাভাঙ্গা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সকাল ১০টা নাগাদ উর্দি পরা কিছু লোক দুটি গাড়িতে করে ১২৬ নম্বর বুথের কাছে আসে এখানেও তারা লাইনে দাঁড়ানো একটি অল্পবয়স্ক ছেলেকে মারে বলে ৪০ বছরের মাকশিদুল মিয়া নামের এক দিনমজুর ওয়েবসাইটটিকে জানান। এরপরে বাহিনী গুলি চালাতে শুরু করে, জানান মাকশিদুল। তিনি ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী। ‘আমার লাইনে একজনের গায়ে গুলি লাগে, আমি পাশের গলি দিয়ে দৌড়ে পালাই,’ বলেন মাকশিদুল। গুলি চালানোর ঘটনায় এক আহত ব্যক্তি জামিউল হক (৩১) জানিয়েছেন, কোনো সহিংসতা ঘটনাস্থলে ছিল না। ‘গত দুদিনে আমি বারবার এই কথা প্রচারমাধ্যমকে বলার চেষ্টা করেছি। কেউ শোনেনি,’ বলেছেন জামিউল।

গুলি চালানোর ঘটনায় যে চারজন মারা গেছেন তাঁদের প্রত্যেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের। এরা অন্য রাজ্যে মজুর হিসেবে কাজ করতেন। একজন ভোটার অনজুপা খাতুনের এক ভাই ছাইমুল হক (১৯) গুলিতে মারা যান। তাঁর অপর ভাইকে পেটায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। অনজুপাও বলেছেন, কোনো রকম প্ররোচনায় ছাড়াই গুলি চালিয়ে তাঁর ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। গোটা অঞ্চল ঘুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আক্রমণের কোনো প্রমাণ পায়নি নিউজলন্ড্রি।

আরও পড়ুন

তবে সিআইএসএফের মুখপাত্র অনিল পাণ্ডে বলেছেন, ‘উত্তেজিত জনতা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আক্রমণ করায় আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায় সিআইএসএফ।’

তৃণমূল কংগ্রেস মনে করছে, এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টায়, যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা মনে করেন ভারতীয় বাহিনীকে মুসলিমরা আক্রমণ করছেন। এর উদ্দেশ্য হিন্দুদের ভোট এক জায়গায় নিয়ে আসা।

ঘটনাকে বিকৃত করার প্রয়াস বিজেপির একটি ভিডিও প্রকাশ করে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়া চার বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী, অর্জুন সিং, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌমিত্র খান দাবি করেছেন শীতলকুচিতে স্থানীয় জনতা সিআইএসএফকে আক্রমণ করেছিল। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, গুরুতর আহত এক সিআইএসএফ কর্মকর্তা বলছেন, শীতলকুচিতে তাঁকে আক্রমণ করা হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে, এটি একটি ফেক (ভুয়া) ভিডিও। ওই কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছিলেন ঠিকই, তবে ঘটনাটি ঘটেছিল পূর্ব ভারতের রাজ্য ঝাড়খন্ডে আর তাঁকে কোনো মানুষ আক্রমণ করেনি। ঝাড়খণ্ডের বাগমারা জঙ্গলে গত শুক্রবার (৯ এপ্রিল) তাঁকে আক্রমণ করেছিল বাঁদরের দল। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবিকে সঠিক বলে জানিয়েছে ইন্টারনেটে তথ্যের সত্যতা যাচাইকারী সংস্থা ‘অল্ট নিউজ’। বিজেপির নেতারা বারবার বলে আসছেন, নির্বাচনে শীতলকুচির মতো জায়গায় জায়গায় আরও গুলি চালানো হবে।

এদিকে আজ (বুধবার) শীতলকুচিতে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুসলিম সম্প্রদায়ের যে চারজন মারা গেছেন তাঁদের পরিবার ও হিন্দু সম্প্রদায়ের যে একজন মারা গেছেন তাঁর পরিবারের সঙ্গে তিনি দেখা করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের যিনি মারা গেছেন তিনি তৃণমূলের হাতে মারা গিয়েছেন বলে প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে। মমতা বলেছেন, নির্বাচন হয়ে গেলে ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানালেও কী ধরনের সাহায্য বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতে পারে, নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা থাকার কারণে মুখ্যমন্ত্রী তা জানাননি। তাঁর আজকের সভা নিয়ে কোনো উত্তেজনা ছড়ায়নি।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতজুড়ে কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধির পাওয়ায় সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট বাকি দফার ভোটে কোনো রকম বড়সড় জমায়েত করবে না। অনলাইনে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারে জোর দেওয়ার কথাই তারা বুধবার জানিয়েছে। এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক দল কোভিডের কারণে ভোটের প্রচারে বড়সড় প্রচার না করার সিদ্ধান্ত নিল।

আরও পড়ুন