বিনা বিচারে ৪০ বছর কারাগারে, অবশেষে জুটল জামিন

কলকাতা হাইকোর্ট
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

৩৫ বছর বয়সে নেপাল থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন দেশটির ইলাম শহরের বাসিন্দা দীপক যোশী। বহুদিন খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান না পেয়ে দীপকের পরিবার হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী তাঁর ‘পারলৌকিক কাজ’ সম্পন্ন করে।

তবে দীপক ঠিকই বেঁচে আছেন। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বিনা বিচারে ভারতের কলকাতার দমদম কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি। সম্প্রতি এক নেপালি নাগরিকের খবরের খোঁজে সেখানে গিয়ে সাংবাদিকেরা খোঁজ পান এই দীপকের। এরপর তাঁকে নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন ছাপে কলকাতার দৈনিক ‘এই সময়’ পত্রিকা। খবরটি প্রকাশের পর শুরু হয় হইচই। খোঁজ নেওয়া হয় কলকাতায় নেপালি দূতাবাসে। সেখান থেকেও জানা যায়, দীপক হারিয়ে যাওয়া সেই নেপালি নাগরিক।

খবরটি প্রকাশের পর কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণণ ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গতকাল বুধবার দীপক যোশীকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন। আর ৪০ বছর আগের একটি হত্যা মামলায় বিনা বিচারে দীপকের বন্দী থাকার ঘটনায় কী হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের ওই ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হবে। এরপরই খুনের মামলার ভাগ্য নির্ধারিত হবে।

দীপক যোশী নেপাল থেকে মূলত পালিয়ে এসেছিলেন। উঠেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং শহরে। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৫ বছর। এখন ৭৫ বছর। দীপক দার্জিলিংয়ে এলেও তা জানা ছিল না দীপকের পরিবারের। পরিবারও তাঁকে নিখোঁজ বলে ধরে নিয়েছিল।

দীপক দার্জিলিংয়ে আসার পর ৪০ বছর আগে ১৯৮১ সালে একটি খুনের মামলায় গ্রেপ্তার হন। তাঁকে পাঠানো হয় কারাগারে। কিন্তু তাঁর কোনো আত্মীয়স্বজন সেদিন আর খোঁজ নিতে পারেননি। চার দশক পর দমদম কারাগারে বিনা বিচারে আটক থাকা এক বন্দীর খোঁজ পাওয়া গেলে তাঁকে নিয়ে খবরটি প্রথম ছাপে ‘এই সময়’ গত ১৯ জানুয়ারি। তারপর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন কারাগারে বন্দিজীবন কাটালেও আড়াই দশক ধরে দীপক বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন দমদমের কেন্দ্রীয় কারাগারে। এখন দীপক বৃদ্ধ। অসুস্থ। মানসিক রোগীও। দীপকের বৃদ্ধা মা ও আত্মীয়স্বজনেরা নেপালেই আছেন। তাঁরাও দীপকের সন্ধান পাওয়ার পর তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তৎপর হয়েছেন। নেপাল দূতাবাসের মাধ্যমে তাঁকে এখন দেশে পাঠানোর তৎপরতা চলছে। ওদিকে ৪০ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া ছেলেকে ফিরে পেতে অপেক্ষা যেন আর ফুরোয় না বৃদ্ধা মায়ের।