ভারত কি করোনার তৃতীয় ঢেউ ঠেকাতে পারবে

ভারতে ডেলটার পর ডেলটা প্লাস নামে করোনার নতুন একটি ধরনের সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে
ছবি: এএফপি

ভারতে গত এপ্রিল ও মে মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বিধ্বংসী রূপ নেয়। এখন এই ঢেউয়ের সংক্রমণ নিম্নমুখী। দেশটিতে সংক্রমণ কমায় বিধিনিষেধ শিথিল করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ভারতে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে করোনার তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানতে পারে। ভারত করোনার তৃতীয় ঢেউ ঠেকাতে পারবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখেছে বিবিসি অনলাইন।

ডেলটার পর ভারতে ডেলটা প্লাস নামে করোনার নতুন একটি ধরনের সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। ডেলটা প্লাস ধরনটি নতুন করে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, ভারতে বর্তমানে প্রাধান্যশীল ‘ডেলটা’ ধরনটি দুর্বল হয়ে ‘ডেলটা প্লাস’ সবল হয়ে উঠতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে কিছু বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেছেন, ভারতে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহের মধ্যে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসা নিয়ে যখন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তখন বিভিন্ন রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে তাদের প্রস্তুতি নিয়ে আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়ছে।

সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ আসা ও তার বিপদ নিয়ে শঙ্কিত হওয়া কতটুকু বাস্তবসম্মত? এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের বরাতে বিবিসি বলছে, ভারতে করোনার আরেকটি ঢেউ আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সেই ঢেউয়ের তীব্রতা ও বিস্তার কেমন হবে, তা কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে।

করোনার সুরক্ষা প্রটোকল
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পিক বা চূড়া আসে গত মে মাসে। এ সময় একাধিক দিন দেশটিতে চার লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হন। কিন্তু কিছুদিন ধরে ভারতে দৈনিক ৫০ হাজারের কম করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। করোনার সংক্রমণ কমার ক্ষেত্রে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে আরোপ করা লকডাউনের একটা বড় অবদান রয়েছে।

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার ধারণ করার জন্য বাজারে মানুষের ভিড়, নির্বাচনী সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় উৎসব প্রভৃতিকে দায়ী করা হয়। এ ক্ষেত্রে দেশটির সরকারের বাজে নীতিগত সিদ্ধান্ত, নজরদারিতে ঘাটতি, প্রাথমিক সতর্কতা উপেক্ষা করার বিষয়গুলোও ভূমিকা রেখেছে। এখন ভারতে একই ভুল যদি আবার করা হয়, তাহলে তৃতীয় ঢেউও বিধ্বংসী হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ চন্দ্রকান্ত লাহারিয়া বলেন, ভারত আবার একটি নাজুক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। ভারতে করোনার পরবর্তী ঢেউ কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে মানুষের আচরণের ওপর।

সংক্রমণ কমার প্রেক্ষাপটে রাজ্যগুলোতে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় চালু করার পক্ষে মত দেন চন্দ্রকান্ত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সবকিছু চালু করে দেওয়ার বিষয়ে তাড়াহুড়ো করি, মানুষ যদি করোনা থেকে সুরক্ষার প্রটোকল অনুসরণ না করে, তাহলে ভাইরাসকে দ্রুত ছড়াতেই কেবল আমরা সাহায্য করব।’

চন্দ্রকান্তর পরামর্শ হলো, করোনার সুরক্ষা প্রটোকল স্থানীয় পর্যায়ে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেখানে যদি কেউ এই প্রটোকল না মানে, তাহলে শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।

নতুন ধরন কি হুমকি সৃষ্টি করতে পারে
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য করোনার ডেলটা ধরনকে দায়ী করা হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে দিলে ভবিষ্যতে করোনার আরও অনেক ধরনই আসতে পারে।

ভারতে নতুন শনাক্ত করোনার ডেলটা প্লাস ধরনটি নিয়ে অনেক উৎকণ্ঠা কাজ করছে। ভারত সরকার ইতিমধ্যে করোনার এ ধরনকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে করোনার এ ধরন যে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ সৃষ্টি করতে পারে, তার পক্ষে এ মুহূর্তে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, পরিস্থিতি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বদলে যেতে পারে।

মহামারি বিশেষজ্ঞ ললিত কান্তের মতে, ভাইরাস যতক্ষণ ছড়াতে থাকবে, ততক্ষণ নতুন ধরন সৃষ্টি ও বিস্তারের হুমকি থাকবে। এ জন্য বিপদজনক ধরনগুলো শুরুর দিকেই শনাক্ত করতে সিকোয়েন্সিং বাড়াতে হবে। পাশাপাশি করোনার বিস্তার ঠেকানোর পদক্ষেপগুলো প্রয়োগ করতে হবে।

চলতি মাস পর্যন্ত ভারত করোনার ৩০ হাজার নমুনার সিকোয়েন্সিং করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। বরং সিকোয়েন্সিং আরও বেশি করে করা উচিত।

ভারতীয় চিকিৎসক এ ফাতাহুদ্দিন বলেন, করোনার বিদ্যমান ধরনের বিরুদ্ধে টিকা কাজ করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কিন্তু করোনার নতুন ধরনের বিরুদ্ধে বিদ্যমান টিকা কাজ করবে কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

এ ফাতাহুদ্দিনের মতে, ভারতে করোনার আরেকটি ঢেউ অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু সেই ঢেউয়ের আগমন বিলম্বিত করা সম্ভব। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার বিস্তার আটকে রাখা যায়। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সিকোয়েন্সিং, মিউটেশনের ওপর নজরদারি, সুরক্ষা প্রটোকলের কঠোর প্রয়োগ ইত্যাদি।

চিকিৎসক এ ফাতাহুদ্দিন বলেন, ‘আমরা যদি এই কাজগুলোর সব কটি না করি, তাহলে তৃতীয় ঢেউ ধারণার চেয়েও দ্রুত আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।’