ভারতে করোনার দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড

ভারতে করোনার সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে
ছবি: এএফপি

ভারতে করোনার দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন-সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। আজ শুক্রবার এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

ভারতে এক দিনে এত করোনা রোগী আগে কখনো শনাক্ত হয়নি। ভারতে আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩ লাখ ১৪ হাজার ৮৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় যত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন, তা একটি বিশ্ব রেকর্ড। বিশ্বের কোনো দেশে এখন পর্যন্ত এক দিনে এত রোগী আগে কখনো শনাক্ত হয়নি।

বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ডটি গতকাল বৃহস্পতিবারের আগপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। দেশটিতে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যুতেও নতুন রেকর্ড হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক ২ হাজার ২৬৩ জন করোনায় মারা গেছেন।

আগের দিন দেশটিতে রেকর্ডসংখ্যক ২ হাজার ১০৪ জন করোনায় মারা যান। তার আগের দিন রেকর্ডসংখ্যক ২ হাজার ২৩ জন মারা যান। এর আগে ভারতে গত বছরের ১৬ জুন এক দিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

ভারত সরকারের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৬২ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ভারতে করোনায় মারা গেছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯২০ জন।

বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। সংক্রমণের দিক দিয়ে সম্প্রতি ব্রাজিলকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে ভারত।

ভারতে গত দুই দিন ধরে দৈনিক তিন লাখের ওপরে নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তার আগে ১৫ এপ্রিল থেকে ভারতে প্রতিদিন দুই লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছিল।

ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ। উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা ও রাজধানী নয়াদিল্লির সংক্রমণ পরিস্থিতিও অবনতিশীল।

করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির মুখে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রাত্রিকালীন কারফিউসহ বিভিন্ন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

করোনার সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করা ভারত তার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অক্সিজেন, ওষুধ, হাসপাতালে শয্যার সংকটসহ নানা সমস্যায় দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম।

রাজধানী নয়াদিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতালে অক্সিজেনের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সতর্ক করেছেন। ভারতের বর্তমান জনস্বাস্থ্য সংকটকে জাতীয় জরুরি পরিস্থিতি হিসেবে অভিহিত করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। অক্সিজেন সরবরাহ, অপরিহার্য ওষুধ ও টিকাদানের পদ্ধতি নিয়ে একটি জাতীয় পরিকল্পনা করতে গতকাল কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে আরম্ভ হয়। দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখন পিক বা চূড়ায় উপনীত হয়নি। ফলে দেশটিতে করোনার সংক্রমণ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনার এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা কবে নাগাদ নিম্নমুখী হতে পারে, সে সম্পর্কে দেশটির বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।