ভারতে টিকার সংকট, বেসরকারি হাসপাতালে দাম বেশি

করোনাভাইরাসের টিকার প্রতীকী ছবি

ভারতের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য করোনাভাইরাসের টিকার প্রতি ডোজের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫০ রুপি। কিন্তু এই দামে টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ডের টিকার দাম এখন ৭০০ থেকে ৯০০ রুপির মধ্যে। ভারত বায়োটেকের তৈরি টিকা কোভ্যাক্সিনের ডোজ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ রুপিতে।

ভারতের গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ভারতের বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালে এই টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেখানে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে।

করোনাভাইরাসের মহামারির শুরুর পর থেকে টিকার দিকে তাকিয়েছিল বিশ্ব। এই টিকার আসার পর অধিকাংশ দেশই তা বিনা মূল্যে দিচ্ছে। আর অল্প দেশ এই টিকা দিচ্ছে বেসরকারিভাবে। যেসব দেশ বেসরকারিভাবে টিকা দিচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম রাখা হচ্ছে ভারতে। দেশটিতে সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা কোভিশিল্ডের এক ডোজের দাম রাখা হচ্ছে প্রায় ১২ মার্কিন ডলার। আর কোভ্যাক্সিনের এক ডোজের দাম প্রায় ১৭ ডলার।

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল, সরকার ১৫০ রুপিতে টিকা সংগ্রহ করবে। এরপর সেই টিকা যাবে রাজ্য সরকার ও বেসরকারি হাসপাতালের কাছে। বেসরকারি হাসপাতাল সেই টিকার জন্য বাড়তি ১০০ রুপি নিতে পারবে।

অনেক বেসরকারি হাসপাতালে সরকারের নির্দেশনা না মেনে টিকার প্রতি ডোজ দেওয়ার জন্য ২৫০ থেকে ৩০০ রুপি নিচ্ছে। এমন একটি হাসপাতাল ম্যাক্স। এই হাসপাতালের এক মুখপাত্র টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, কোভিশিল্ড টিকার প্রতি ডোজের ভিত্তিমূল্য ৬৬০ থেকে ৬৭০ রুপি। এর মধ্যে জিএসটি, পরিবহন ও সংরক্ষণ খরচও রয়েছে। কিন্তু পরিবহনকালে কিছু টিকা নষ্ট হচ্ছে। এই পরিমাণ ৫ থেকে ৬ শতাংশ। ফলে টিকার দাম পড়ছে ৭১০ থেকে ৭১৫ রুপি। এরপর টিকা দেওয়ার জন্য হাসপাতালের খরচ হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ রুপি। তাই কোভিশিল্ডের প্রতি ডোজের দাম পড়ছে ৯০০ রুপি।

কিন্তু এখানে একটি ধোঁয়াশা রয়ে যাচ্ছে। কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান দুটি যে মূল্য ঘোষণা করেছিল, সব বেসরকারি হাসপাতালের জন্য এক কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, ভারত বায়োটেক ঘোষণা দিয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালের জন্য তাদের টিকার প্রতি ডোজের দাম থাকবে ১ হাজার ২০০ রুপি। আর সেরাম ইনস্টিটিউট ঘোষণা দিয়েছিল, তাদের টিকার দাম হবে ৬০০ রুপি। কিন্তু রাজ্য ভিত্তিতে এই টিকার দাম দ্বিগুণ হয়েছে। দামের এমন পার্থক্যের কারণে সতর্কবার্তা উচ্চরণ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এ ছাড়া বিভিন্ন রাজ্য ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছে, টিকা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত টিকার মজুত নেই। দিল্লির মুখমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, তাঁদের কাছে যে পরিমাণ টিকা রয়েছে, তা দিয়ে চার থেকে পাঁচ দিন টিকা কার্যক্রম চালানো যাবে। দিল্লিতে প্রতিদিন টিকা দেওয়া হচ্ছে প্রায় এক লাখ মানুষকে।

মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত শনিবার জানিয়েছেন, সেরাম ইনস্টিটিউট ইতিমধ্যে তাদের জানিয়েছে, তারা ২৬ মে পর্যন্ত টিকা সরবরাহ করতে পারবে না। তেলেঙ্গানা রাজ্যের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, টিকার পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় তারা শুধু ৪৫ বছরের ওপরের নাগরিকদের এই টিকা দিতে পারছে। কেরালা বলেছে, এক কোটি টিকার চাহিদার বদলে তারা টিকা পেয়েছে মাত্র তিন লাখ।

এমন ঘটনা ঘটছে বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রেও। তারাও টিকার ফরমাশ দিয়ে পর্যাপ্ত টিকা পাচ্ছে না।