ভারতে সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের চোখরাঙানি

বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে সড়ক অবরোধ করে কৃষকদের বিক্ষোভ। ১১ জানুয়ারি ভারতের দিল্লির সীমান্তবর্তী উত্তর প্রদেশের গাজিপুর এলাকায়
ছবি: এএফপি

প্রস্তাব আগেই দেওয়া হয়েছিল। তবে সরকার তা কানে তোলেনি। শেষ পর্যন্ত আজ সোমবার ভারতের সর্বোচ্চ আদালত চোখ রাঙাতে বাধ্য হলেন। কেন্দ্রীয় সরকারকে আদালত স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন, আইন স্থগিত রেখে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে আলোচনা চালানো হোক। সরকার তা না করলে সুপ্রিম কোর্টকেই সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এটা কোনো ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ হতে পারে না।

ভারতের আইনসভায় সম্প্রতি পাস হওয়া কৃষি আইনসংক্রান্ত একাধিক মামলা সুপ্রিম কোর্টে হয়েছে। সব মামলা একসঙ্গে শুনানিও শুরু হয়েছে। আগের দিনের শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকার বলেছিল, কৃষকদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা চলছে। সমাধান নিয়ে সরকার আশান্বিত। কিন্তু সেই আশ্বাস সত্ত্বেও আলোচনা বিন্দুমাত্র এগোয়নি; বরং দুই পক্ষের মনোভাব আরও দৃঢ় হয়েছে।

এ অবস্থায় সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করে সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের মোটেই মনে হচ্ছে না আপনারা গুরুত্বের সঙ্গে কার্যকরভাবে এ বিষয়ের মোকাবিলা করছেন। পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। বয়স্ক ব্যক্তিরা, নারীরা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। মৃত্যু ঘটছে। কৃষকেরা আত্মহত্যা করছেন। আমরা কেউই নিজেদের হাত রক্তাক্ত দেখতে চাই না। আর কোনো মৃত্যু দেখতে চাই না।’

সরকারের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল বলার চেষ্টা করেন, তিন-চারটি রাজ্যের কৃষক শুধু এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। বৃহত্তর সমাজের কৃষকেরা নেই। তাঁরা মনে করছেন, এই আইন কৃষকদের পক্ষে লাভজনক। অ্যাটর্নি জেনারেল তড়িঘড়ি নির্দেশ দেওয়ার বিরোধিতা করে আরও কিছুদিন সময় চান।

প্রধান বিচারপতি সেই আবেদনকে গুরুত্ব দেননি। বরং অ্যাটর্নি জেনারেলকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না। এই সম্পর্কে লেকচার দেওয়ারও দরকার নেই। আইন ভালো, এ দাবি করে একটা মামলাও হয়নি। কোনো কিছু গড়বড় হলে আমরা প্রত্যেকেই তার জন্য দায়ী থাকব। আমরা আজ পর্যন্ত একাধিক প্রশ্নের সদুত্তর পাইনি।’ প্রধান বিচারপতির প্রস্তাব, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি আর এম লোধাকে ওই কমিটির চেয়ারপারসন করা যেতে পারে। তাতে রাখতে হবে কৃষি বিশেষজ্ঞদেরও।

আন্দোলনকারী কৃষকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইন স্থগিত রাখার পরও আন্দোলন চালানো যেতে পারে। তবে তা দিল্লির সীমানায় নাকি অন্যত্র, আন্দোলনকারীদেরই তা ঠিক করতে হবে। আপনাদের ভরসা আছে কি নেই, সেটা বড় নয়। তবে আমরা সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতকে তার কাজ করতে হবে।’

ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন ২৬ জানুয়ারি কৃষকেরা দিল্লির রাজপথে ট্রাক্টর মিছিল করবেন বলে জানিয়ে রেখেছেন। সম্প্রতি এর মহড়াও হয়ে গেছে। এর আগেই সুপ্রিম কোর্ট কিছু একটা করতে আগ্রহী, যাতে সমাধানের পথ প্রশস্ত হয়। এ–সংক্রান্ত পরবর্তী শুনানির দিন শুক্রবার ধার্য করেছেন আদালত।