ভারতের প্রাণসংহারী লু হাওয়া: কারণ কী, শেষ কবে?

ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

সরকারি হিসেবেই ভারতে গত এক সপ্তাহে দাবদাহে মারা গেছে দুই হাজার লোক। সবচেয়ে গরমের শিকার হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা। এই দুই রাজ্যেই এক সপ্তাহে মরেছে ১৭৭৬ জন।
তীব্র গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরাও মরছে। বেঁচে থাকা প্রাণীকুলের প্রাণ হয়ে উঠেছে ওষ্ঠাগত।
ভারতের মাটি এতটাই গরম হয়ে উঠেছে যে এ মুহূর্তে এই গ্রহের সবচেয়ে গরম অঞ্চলগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে দেশটি। গত বুধবারে ঝাড়খন্ড এবং ওডিশার পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১৬ দশমিক ছয় ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্থানীয় মানুষই যে শুধু ঘেমে-নেয়ে যাচ্ছে তা নয়, প্রচণ্ড গরমে রাস্তার পিচ পর্যন্ত গলে যাচ্ছে। গাড়িই চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
এই গরমের যন্ত্রণা এবং ক্ষতি কতটা বিধ্বংসী তা এই পরিসংখ্যানেই বোঝা যাবে। এ কয়দিনে শুধুমাত্র গরমের কারণে ভারতে মারা গেছে ২০০০ মানুষ। গত বুধবার এক বৃদ্ধ বার্তা সংস্থা সিএনএনের কাছে তাঁর ৩৮ বছর বয়সী সন্তান হারানোর বিষাদ বর্ণনা করেন। ওই ছেলে বৃদ্ধ বাবার জন্য দোকান থেকে ওষুধ কিনতে বের হয়েছিলেন মাত্র। গরমের কারণে সঙ্গে সঙ্গেই হিটস্ট্রোক করে মারা যান তিনি।
ভারতের এই গরমের পেছনের কারণ কী, কবেইবা শেষ হবে এমন গরম? বিশেষজ্ঞদের মতে গরমের শুধুমাত্র একটি কারণ নয়। তবে নাসার গোড্ডার্ড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজের গবেষক ও বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন কুকের মতে, জলবায়ূ পরিবর্তন একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু জলবায়ূর কতটুকু পরিবর্তন এই গরমের কারণ তা গবেষণা ছাড়া বলা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
সিএনএনের আবহাওয়াবিদ মনিকা গারেতের মতে, একদিকে বইছে লু হাওয়া। অন্যদিকে পাকিস্তান এবং উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে আসা গরম এবং শুষ্ক হাওয়া পুরো অঞ্চলকে করে তুলছে আরও গরম। তাঁর মতে, ভৌগোলিক অবস্থানও একটা কারণ। উঁচু পাহাড়গুলো উত্তর পূর্ব থেকে ঠান্ডা বাতাসকে বন্ধ করে দিচ্ছে। 

প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নয়। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানেও অনেক বেশিই গরম। অনেক জায়গায় প্রায় ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পার হয়ে গেছে। কিন্তু ভারতই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী এর অধিক ঘনত্বের জনবসতির কারণে। ভারতের ১২০ কোটিরও অধিক জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই মাত্র বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে ভারতের প্রায় ৪০ কোটি জনসংখ্যার কোনো ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশন নেই।
তাহলে কী শুধুই গরম ভবিষ্যৎ? সাধারণত ভারতে গ্রীষ্মকালে গরম একটু বেশিই হয়। মে ভারতের সবচেয়ে বেশি গরম মাস। ভারতের কয়েকটি অঞ্চলের এ সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। হিটওয়েভ ভারতে একটি সাধারণ ঘটনা। ২০০২ ও ২০০৩ সালে গরমের কারণেই এক শয়েরও বেশি মানুষ মারা যায়। কিন্তু গবেষণা বলছে ভারতের ভবিষ্যতের গ্রীষ্মকালগুলো হবে আরও বেশি শোচনীয়। দেশের দক্ষিণাংশই সবচেয়ে বেশি হিটওয়েভের আক্রমণের শিকার হবে। তবে পুরো দেশই হয়তো ৩০ দিনের জন্য এই হিটওয়েভের আক্রমণের শিকার হবে ভবিষ্যতে।
তাহলে এ গরমের শেষ কোথায়? গত বুধবার রাতে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনারত প্রায় ১০ লাখ হায়দারাবাদীর জীবনে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছিল সামান্য সময়ের বৃষ্টি। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটা সম্ভাবনা আছে সপ্তাহের শেষের দিকে একটি মৌসুমি বায়ু বয়ে যেতে পারে ভারতের ওপর দিয়ে। এর পরেই হয়তো কিছুটা স্বস্তি আসবে জনজীবনে।