ভারতের রাজ্যসভায় হুলুস্থুল, ৮ সদস্য বহিষ্কার

ভারতের পার্লামেন্ট ভবন
ফাইল ছবি

কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ ঘিরে বিক্ষোভের জেরে ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার আটজন বিরোধীদলীয় সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কারের কারণে এই আটজন সদস্য চলতি অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন না। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুর এই রুলিংয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবেরই পরিচয় দিচ্ছে। আমরা এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।’

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘সর্বজ্ঞানী সরকারের অসীম অহংবোধ দেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। সোনা ফলানো কৃষকদের চোখ থেকে রক্ত অশ্রু ঝরছে।’

বহিষ্কার হওয়া আট সাংসদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূল সদস্য ডেরেক ও' ব্রায়ান ও দোলা সেন। বাকিরা কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ডিএমকে ও সিপিএমের সদস্য। আজ সোমবার সংসদ ভবন চত্বরে বিরোধীরা অবস্থান বিক্ষোভ দেখান। বিরোধীরা রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন। চেয়ারম্যান তা খারিজ করে দিয়েছেন।

কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্দেশ্যে আনা তিনটি অধ্যাদেশকে বিলে রূপান্তর করা নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে সরকারপক্ষের বিবাদ বাধে। বিলগুলো লোকসভায় পাস হলেও রাজ্যসভায় প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ে। আরও বিবেচনার জন্য বিলগুলো সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি না মেনে গত রোববার সেগুলো ধ্বনি ভোটে পাস করিয়ে এক নতুন নজির সৃষ্টি করা হয়। সম্মিলিত বিরোধী প্রতিরোধ ও উত্তেজনার মাঝে সভা মুলতবি করে দেওয়া হয়। সোমবার সাসপেন্ড করা হয় আট সদস্যকে।

বিরোধীরা ওই সংস্কারকে ‘কৃষকদের মৃত্যু পরোয়ানা’ বলেছে। সরকারপক্ষ বলছে, ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’। সরকারের দাবি, ওই সংস্কারের ফলে কৃষি ক্ষেত্র উন্মুক্ত হবে। বেসরকারি ও বহুজাতিক লগ্নি বাড়বে। কৃষকেরা ফসলের ন্যায্য দাম পাবেন।

বিরোধীদের বক্তব্য, এর ফলে কৃষকেরা বহুজাতিক সংস্থার হাতের পুতুল হয়ে যাবেন। ক্রীতদাসে পরিণত হবেন। কৃষকদের অবস্থা হবে অতীতের নীলকর চাষিদের মতো।
কৃষি সংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন পাঞ্জাব, হরিয়ানাসহ বহু রাজ্যের কৃষক।

বিজেপির সবচেয়ে পুরোনো শরিক অকালি দল প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে এসেছে। বিজু জনতা দল, ওয়াই এস আর কংগ্রেস বা তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির মতো দল যারা অন্যান্য বহু ক্ষেত্রে বিজেপিকে রাজ্যসভায় সাহায্য করেছে, তারাও এই সংস্কারের বিরুদ্ধে গেছে। ফলে নতুন এক রাজনৈতিক সমীকরণের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে।

এই অবস্থায় টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। আজ তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ভারতের রূপান্তর প্রক্রিয়া অব্যাহত। মানুষকে চুপ করিয়ে, সাংসদদের সাসপেন্ড করে, কৃষকদের অন্ধকারে রেখে ও কালা আইন পাস করিয়ে সর্বজ্ঞানী সরকারের অসীম অহংবোধ দেশকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে।’