ভারতের সংসদে মমতা ইন, শান্তনু আউট

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কংগ্রেসের পর এবার ভারতীয় পার্লামেন্টে নজির সৃষ্টি করল তৃণমূল কংগ্রেস। দলটির নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় সংসদের দুই কক্ষের কোনোটিরই সদস্য নন। এরপরও সংবিধান মাথায় রেখে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন করেছে।

ইতিমধ্যে নেতা করার বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস গতকাল চিঠিও দিয়েছে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে। এর আগে ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী লোকসভার সাংসদ না হলেও সংবিধান মেনে লোকসভায় কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেতা হয়েছিলেন।

মমতা এখন তৃণমূলের সাংসদ নন। যদিও তিনি সাতবার লোকসভার সাংসদ এবং তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। এবার তিনি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পরাজিত হন। তবে ভারতের সংবিধান অনুযায়ী মমতা বিধায়ক না হয়েও দলের সিদ্ধান্তে মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন ছয় মাসের জন্য। ওই সময়ের মধ্যে অবশ্য মমতাকে এই রাজ্যের কোনো একটি বিধানসভা আসন থেকে জয়ী হয়ে আসতে হবে রাজ্য বিধানসভায়। যদিও মমতা নন্দীগ্রাম আসনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি নির্বাচনের ফলাফল গণনায় কারচুপির অভিযোগ এনে কলকাতা হাইকোর্টে একটি নির্বাচনী মামলা করেছেন। সেই মামলা এখনো চলছে।

ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে মমতার দল তৃণমূলের আসন ২২টি। তাও সব পশ্চিমবঙ্গের। এই রাজ্যের জন্য লোকসভার ৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপির রয়েছে ১৮টি এবং কংগ্রেসের রয়েছে ২টি। তবে লোকসভায় মমতা সংসদীয় দলের নেতা হলেও এই লোকসভায় দলের নেতা হিসেবে থাকছেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আর রাজ্যসভায় দলের নেতা হয়ে থাকছেন সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। ফলে এবার লোকসভায় নতুন করে ঢুকলেন মমতা।

রাজনৈতিক মহলের কথা, ২০২৪ সালের লোকসভার নির্বাচন মাথায় রেখে মমতাকে এই পদে বসিয়েছে দল। যাতে করে মমতা মোদি বিরোধী জোটে শামিল হয়ে দেশব্যাপী মোদির বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করতে পারেন। তৃণমূলের স্বপ্ন, মমতাকে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী শক্তির মুখ হিসেবে দাঁড় করানো। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন—কংগ্রেস, এনসিপি, আম আদমি পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, তেলেগু দেশম, বামদলসহ মোদি বিরোধী দল মমতাকে কি সমর্থন করবে?

এদিকে ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পেগাসাস ইস্যু কেন্দ্র করে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য শান্তনু সেনকে বর্তমান অধিবেশন থেকে বহিষ্কার করেছেন চেয়ারম্যান ভেংকাইয়া নাইডু। এই বর্ষাকালীন অধিবেশন চলবে আগামী ১৩ আগস্ট পর্যন্ত। শান্তনু সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার পেগাসাস ইস্যুতে কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব যখন রাজ্যসভায় বিবৃতি দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর হাত থেকে কাগজপত্র নিয়ে তা ছিঁড়ে ফেলেন শান্তনু সেন। এ জন্য সরকারপক্ষ শান্তনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান শান্তনু সেনকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত অধিবেশনে যোগদান থেকে বহিষ্কার করেন।

যদিও তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করেছে, শান্তনু সেনকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং রাজ্যসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় বলেছেন, ‘আমাদের সাংসদ কাগজ কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলার পর কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং যেভাবে হুমকি দিয়েছেন, তাঁর সাজা কী হবে?’

এদিকে তৃণমূল ঠিক করেছে, এ বিষয় নিয়ে কংগ্রেস, সিপিএম, এনসিপি, ডিএমকেসহ বিজেপি বিরোধী দলগুলি একজোট হয়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে কড়া চিঠি দেবে।