মনোনয়ন না পেয়ে কেউ কাঁদছেন, কেউ দিচ্ছেন হুমকি

গতকাল শুক্রবার কালীঘাটের বাসভবনের দলীয় অফিসে সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করেন মমতা
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

তৃণমূল কংগ্রেস থেকে মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক নেতা। জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকে মনে করছেন, দলে তাঁদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। কেউ কেউ আবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। অনেকে দল ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২৯১টি আসনের প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেন তিনি। বাকি তিনটি আসন দেওয়া হয়েছে দার্জিলিংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে।

অপেক্ষাকৃত তরুণ, স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন, দলের প্রতি অনুগত এবং এলাকায় জনসমর্থন আছে—এমন নেতারা এবারের প্রার্থী তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন বলে তৃণমূল জানিয়েছে। তবে এ তালিকা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি দলের একাংশ। মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। হুমকি দিচ্ছেন দল ছাড়ার।

গতকাল শুক্রবার রাতেই কলকাতার বড় বাজারের তৃণমূল বিধায়ক দীনেশ বাজাজ মনোনয়ন না পেয়ে দলত্যাগ করেছেন। রাতেই ছুটে গেছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের কাছে। বলেছেন, হিন্দিভাষী মানুষের সঙ্গে ভাঁওতাবাজি হলো। অন্যদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাতগাছিয়ার বিধায়ক ও মমতার ঘনিষ্ঠ সোনালি গুহ এবার মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষোভে প্রকাশ্যে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের প্রতিটি লড়াইয়ে দিদির পাশে থেকেছি। এই কি পুরস্কার দিদির কাছ থেকে!’

মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙরের জাঁদরেল তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘দলে আজকে আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে।’ এ ঘটনার পর আরাবুলের সমর্থকেরা এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে।

আরাবুল বলেন, ‘এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তই আমি মেনে নেব।’

অন্যদিকে, সিঙ্গুর আন্দোলনের মমতার সঙ্গী শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, দলে যারা চাঁদাবাজি করতে পারবে, অর্থ জালিয়াতি করব তারাই এবার দলকে মজবুত করবে।

মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বিধায়ক শম্পা দরিপা, মইনুদ্দিন শামস, স্মিতা বকসী, খেলোয়াড় দীপেন্দু বিশ্বাস ও দীনেশ বাজপেয়ির সমর্থকদের মধ্যে।

তৃণমূলের প্রার্থীতালিকা থেকে এবার ছিটকে পড়েছেন পাঁচ মন্ত্রীসহ ৬৪ জন বিধায়ক। বাদ পড়া মন্ত্রীরা হলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী আবদুর রেজ্জাক মোল্লা, কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিমন্ত্রী রত্না ঘোষ কর এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা।

টালিউডের তারকাদের প্রার্থী করা নিয়ে প্রতিবারই চমক দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে। তারকাদের দলে টানাটানি নিয়েও রাজনীতির শেষ নেই। মমতার প্রার্থীতালিকায় এবার ১৫ জন তারকা জায়গা করে নিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ১১ জন প্রথমবারের মতো প্রার্থী হলেন।

তৃণমূলের তারকা প্রার্থীরা হলেন রাজ চক্রবর্তী, সায়নী ঘোষ, জুন মালিয়া, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক, বীরবাহা হাঁসদা, কীর্তনীয়া অদিতি মুন্সী, কৌশানী মুখোপাধ্যায়, লাভলি মৈত্র, সোহম চক্রবর্তী, ইন্দ্রনীল সেন, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী এবং নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। এ তালিকায় আছেন সাবেক ক্রিকেট তারকা মনোজ তেওয়ারি ও প্রাক্তন ফুটবলার বিদেশ বসুও।

তবে এবার তারকা প্রার্থীদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন দেবশ্রী রায়। দেবশ্রী রায় ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দীঘি আসনের তৃণমূল বিধায়ক। আরও বাদ পড়েছেন প্রখ্যাত ক্রীড়াবিদ দীপেন্দু বিশ্বাস। গতবার তিনি উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন।

তারকা প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, পিছিয়ে থাকা আসনগুলোয় তারকা প্রার্থীদের দাঁড় করিয়ে ‘নিরাপদ বাজি খেলায়’ অংশ নিয়েছেন মমতা।

এবারের তৃণমূলের প্রার্থীতালিকায় দেখা গেছে দুটি চমক। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কলকাতা পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে মনোনয়ন দিয়েছেন মমতা। বিজেপির বর্তমান সাংসদ সৌমিত্র খাঁর স্ত্রী সুজাতা খাঁকেও দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের মনোনয়ন। মূলত, সুজাতা খাঁ ও রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁদের স্বামীদের বনিবনা না হওয়ায় বিজেপি শিবির থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তাঁরা।

এ ছাড়া মমতা মনোনয়ন দিয়েছেন বেহালা পূর্বে দলের সচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। আরও দিয়েছেন কলকাতার সাবেক মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সিঙ্গুরে সাবেক মন্ত্রী বেচারাম মান্না, সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্র, মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মন্ত্রী সুজিত বসু, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী জাভেদ খান, মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু প্রমুখকে।