মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘ডান হাত’

শুভেন্দু অধিকারী

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতা ও রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য শুভেন্দু অধিকারী আজ পদত্যাগ করলেন রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে। তিনি ছিলেন রাজ্যের দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে, পরিবহন এবং সেচ। আজ শুক্রবার দুপুরে শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে। তবে সেই চিঠিতে তিনি কোনো কারণ উল্লেখ করেননি। শুধু পদত্যাগের কথা বলেছেন।

শুভেন্দু তাঁর পদত্যাগপত্র মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছেও পাঠিয়েছেন। রাজ্যপাল এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগপত্র পেয়েছেন।

শুভেন্দু পদত্যাগ করেছেন রাজ্যের সরকারি যেসব সংস্থার দায়িত্বে ছিলেন, সেই সব পদ থেকেও। পদত্যাগপত্রের পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে তাঁর জন্য পাইলট কার ও জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নিতে বলেছেন।

শুভেন্দু অধিকারী একসময় মমতার ডান হাত বলে পরিচিত ছিলেন। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মূল মুখ তিনি। নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর আন্দোলনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসার মূল ভিত্তি। শুধু তা–ই নয়, শুভেন্দু ছিলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতিও। শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বর্তমানে সাংসদ। তিনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর ছোট ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীও সাংসদ। আর আরেক ভাই স্থানীয় পৌরসভার চেয়ারম্যান। মোট কথা, শুভেন্দু অধিকারীদের ‘অধিকারী বাড়ি’ একসময় ছিল মমতাকে ক্ষমতায় নেওয়ার একটি দুর্গ।

কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইয়ের ছেলে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতিতে আসার পর থেকে শুভেন্দুর ক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করে। একপর্যায়ে শুভেন্দুকে সরিয়ে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি করা হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এরপর থেকেই শুভেন্দুর গুরুত্ব কমতে থাকে তৃণমূল রাজনীতিতে।

শুভেন্দু অধিকারীকে রাজ্যের তিনটি জেলার পর্যবেক্ষকের পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে রাজ্যে গুঞ্জন শুরু হয়, শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছাড়ছেন। এমনও শোনা যায়, তিনি যোগদান করতে চলেছেন বিজেপিতে। শুধু তা–ই নয়, এমন প্রচারও হয়, বিজেপি শুভেন্দুকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রচারের মুখ করে নির্বাচনে লড়তে পারে।

এসব ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়লে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ও সাংসদ সৌগত রায় এগিয়ে আসেন। তিনি শুভেন্দুর সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করলেও শুভেন্দুর মন গলাতে পারেননি। আজ সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে শুভেন্দু অধিকারী পদত্যাগ করেন মন্ত্রিসভা থেকে।