মমতার নতুন দাবি, সারা দেশে এক টিকা নীতি চালু হোক

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
ছবি: এএফপি

সারা দেশে এক টিকা নীতি গ্রহণের আরজি জানাল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আজ শুক্রবার রাজ্যের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে এক আবেদন জানিয়ে বলা হয়েছে, তৃতীয় দফার যে টিকানীতি কেন্দ্রীয় সরকার গ্রহণ করতে চলেছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করে সারা দেশের জন্য এক নীতি চালু করা হোক। রাজ্য সরকার এই দাবিও জানিয়েছে, বিভিন্ন টিকার দামের তারতম্য ঘুচিয়ে সব ধরনের টিকা ১৫০ রুপিতে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হোক। আগামী সোমবার সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারের এই আবেদন বিবেচনা করবেন।

কোভিড–১৯ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলার শুনানি চলছে। প্রায় প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় সরকারকে অপ্রিয় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সদ্য নির্বাচিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার সারা দেশে সবার জন্য সমান টিকানীতি গ্রহণের আরজি জানিয়ে নতুন চাপ সৃষ্টি করল। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোভিড–১৯ নীতি ও অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লেখেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ফাইল ছবি

এবার সব রাজ্যের জন্য এক ও অভিন্ন টিকানীতির দাবি জানালেন, যে নীতিতে সব ধরনের টিকা একই দামে সরবরাহের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভারত সরকারের উচিত অবিলম্বে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কোভিডের টিকা সব রাজ্য সরকারের কাছে সমহারে পৌঁছে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র বিলম্বের অবকাশ নেই।’

আইন ও আদালতসংক্রান্ত সংবাদমাধ্যম ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’ অনুযায়ী রাজ্য সরকার আবেদনে বলেছে, তৃতীয় দফার টিকাকরণের যে নীতি কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছে, তা অবিলম্বে বাতিল করা দরকার। সরকারের উচিত যে ১৬টি সংস্থা টিকা প্রস্তুত করছে, তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের হাতে তুলে দেওয়া। এ জন্য এখনই বিভিন্ন সংস্থার বেঁধে দেওয়া টিকার বিভিন্ন দাম তুলে দেওয়া প্রয়োজন, যাতে দেশের সব মানুষ একই দামে টিকা পেতে পারে। প্রতিটি টিকার দাম ১৫০ রুপি বেঁধে দেওয়ার আরজিও এই আবেদনে জানানো হয়, যাতে রাজ্যগুলোর মধ্যে টিকা পেতে প্রতিযোগিতায় নামতে না হয়। আবেদনে বলা হয়েছে, হার্ড ইমিউনিটির জন্য দেশের অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হবে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ফাইল ছবি

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন কোনো অবস্থায় রাজ্য সরকারগুলোকে ফেলা উচিত হবে না, যেখানে টিকার দামের জন্য তারা অহেতুক দরাদরি করতে ও পারস্পরিক প্রতিযোগিতায় নামতে বাধ্য হয়। রাজ্য সরকারগুলোকে টিকা দিতেই হবে। সে জন্য টাকা খরচ করতে হবে। এমনিতেই স্বাস্থ্য পরিষেবা বজায় রাখতে রাজ্যের হিমশিম অবস্থা। টিকার দাম এক না হলে কোষাগারের হাল আরও খারাপ হবে।
টিকার দাম নিয়ে চলতি সপ্তাহে শুরুতেই সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছিলেন। কেন্দ্রকে দামের বিষয়টি পর্যালোচনা করতে বলেছিলেন, যাতে রাজ্যে রাজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।

ভোটের আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টিকানীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। ২২ এপ্রিল তিনি টুইট করে বলেছিলেন, ‘বিজেপি বারবার এক দেশ, এক দল, এক নেতার কথা বলে। অথচ মানুষের জীবন বাঁচাতে টিকার এক দামের কথা বলে না।’ টুইটে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক ভারতবাসীর বিনা মূল্যে টিকা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সরকারের উচিত সবার জন্য টিকার একটাই দাম ধার্য করা, তা সে কেন্দ্র বা রাজ্য যে সরকারই দিক না।’ দেশের সবাইকে টিকা দিতে ৩০ হাজার কোটি রুপির প্রয়োজন। দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবনসহ সেন্ট্রাল ভিস্তার খোল নলচে বদলাতে কেন্দ্রীয় সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এ নিয়েও বিভিন্ন মহলে সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।