মমতার সরকার গঠনের মুখে চাঙা হলো সারদা দুর্নীতি মামলা

সুব্রত মুখার্জি, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়
ছবি : ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনের পরপরই সারদা অর্থ কেলেঙ্কারি মামলা আবার চালুর অনুমোদন মিলল। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় গতকাল রোববার তৃণমূলের তিন নেতা ও আরেক সাবেক নেতার বিরুদ্ধে সারদা অর্থ কেলেঙ্কারি মামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। এই চার নেতা হলেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও নবনির্বাচিত বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তৃণমূলের নেতা ও কলকাতা পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বর্তমান মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম, সাবেক মন্ত্রী ও নবনির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এবং কলকাতা পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বর্তমান বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়।

২০১৬ সালের মার্চে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের ঘুষ নেওয়ার এক কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়। তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৭ সালে মার্চে মামলার তদন্তের ভার দেওয়া হয় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইর হাতে। যদিও ২০১৬ সালে এই নারদ স্টিং অপারেশনের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর প্রথম এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি।

সে মামলায় আসামি করা হয় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন চার মন্ত্রীসহ তৃণমূলের অন্য নেতাদের। কিন্তু মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মামলা চালাতে গেলে রাজ্যপালের অনুমতির প্রয়োজন হয়। সে লক্ষ্যে সিবিআই রাজ্যপালের কাছে এ মামলা চালানোর জন্য অনুমতি চাইলে অবশেষে গতকাল রাজ্যপাল এই চার নেতার বিরুদ্ধে মামলা চালানোর অনুমতি দেন। এই চার নেতার মধ্যে আজ সোমবার নতুন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম। মদন মিত্রকে এবার মন্ত্রী করা হয়নি। আর শোভন চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগদান করেছেন। তাই এত দিন পর সিবিআই নারদ মামলা চালানোর অনুমতি পাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য রাজনীতিতে নতুন এক মাত্রা যোগ হয়েছে।

২০১৬ সালের ১৪ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একদল নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কদের অর্থ গ্রহণের এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে দিল্লির নারদ নিউজ ডট কম নামের একটি ওয়েব পোর্টাল। তারা একটি গোপন স্টিং অপারেশন করে বলে তাদের হাতে রয়েছে এ–সংক্রান্ত ৫২ ঘণ্টার ফুটেজ।

২০১৬ সালের ১৪ মার্চ সেই ভিডিও কলকাতার রাজ্য বিজেপির কার্যালয়ে ফাঁস করে বিজেপি। এ তথ্য ফাঁসের পর বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। অন্যদিকে, বিরোধীদলীয় নেতা ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র অবিলম্বে নির্বাচন স্থগিত রাখারও দাবি তুলেছিলেন। সূর্যকান্ত মিশ্র আরও বলেছিলেন, মানুষের টাকা লুট করেছে তৃণমূল। ওদের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।

এ স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা ও মন্ত্রীর হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে টাকা। এ স্টিং অপারেশনে যাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ এসেছে, তাঁরা হলেন ছয় তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়, সুলতান আহমেদ, সৌগত রায়, শুভেন্দু অধিকারী, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়সহ রাজ্য মন্ত্রিসভার দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সুব্রত মুখার্জি ও ফিরহাদ হাকিম এবং সারদা–কাণ্ডে কারাবন্দী সাবেক মন্ত্রী ও বিধায়ক মদন মিত্র, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক ইকবাল আহমেদ ও সাবেক আইপিএস পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ এম এইচ মির্জা। সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ কর্ণ শর্মার ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ফাঁস হয়ে যায়। আর এ ঘটনা নিয়ে রাজ্যজুড়ে ঝড় ওঠে। সেই ঝড় সামাল দেওয়ার আগেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঝড়।

এ তথ্য ফাঁসের পর তৃণমূল নেতা মুকুল রায় বলেছিলেন, ভোটের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ এক বড় ষড়যন্ত্র। মুকুল রায় এখন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও এবারের নবনির্বাচিত বিধায়ক।

এ ঘটনার পর ২০১৬ সালের ২১ মার্চ ফাঁস হয় স্টিং অপারেশনের দ্বিতীয় ফুটেজ। এ ফুটেজও কলকাতার বিজেপি কার্যালয়ে ফাঁস করেন বিজেপির নেতারা। সে ফুটেজে সেদিন দেখা যায় তৃণমূলের এক সাংসদ ও এক ছাত্রনেতার ছবি। এ ছাত্রনেতা হলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি শঙ্কুদেব পান্ডা এবং হুগলির আরামবাগের তৃণমূল তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার।

দ্বিতীয় ভিডিওটি ফাঁসের পর নারদ নিউজ ডট কমের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দুই নেতা টাকা নেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা হলেন তৃণমূলের দুই সাংসদ সুব্রত বক্সি ও দীনেশ ত্রিবেদী।