মমতার নেতৃত্ব নিয়ে মোদিবিরোধীদের হিসাব-নিকাশ

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ফাইল ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল বিজয়ে এবার মোদিবিরোধীরা নতুন করে হিসাব কষছে। তারা ইতিমধ্যে উপলব্ধি করতে পেরেছে, ২০২৪ সালে ভারতের পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন মোর্চা ইউপিএ ও মোদিবিরোধী অন্যান্য শক্তি একজোট হলে তাদের পক্ষে জয়ী হওয়া সম্ভব।

বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের পর মহারাষ্ট্রের জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি বা এনসিপির প্রধান শারদ পাওয়ার বলেই দিয়েছেন, ২০২৪ সালের পরববর্তী লোকসভা নির্বাচনে মোদিবিরোধীদের একজোট হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে লড়তে হবে। তবেই ভারতবর্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপিকে পরাস্ত করা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিবিরোধী বেশ কটি দল ইতিমধ্যে মমতার নেতৃত্বে লোকসভা নির্বাচনে লড়ার দাবি তুলেছে।

বিভিন্ন মাধ্যমে গুঞ্জন চলছে, এনসিপি, ন্যাশনাল কনফারেন্স, ডিএমকে, আরজেডি, তেলেগু দেশম, জনতা দল (এস), ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চাও শারদ পাওয়ারের দাবির সঙ্গে একমত হয়েছে। তারাও চাইছে ইউপিএর শরিক দল চলে আসুক মোদিবিরোধী এই জোটে। কংগ্রেসের একটি অংশও চাইছে প্রস্তাবিত এ জোটে বিজেপিবিরোধীরা লড়ুক। এ দাবির সঙ্গে আছেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ, কপিল সিবাল, শশী থারুর, মণীশ তেওয়ারী, রেণুকা চৌধুরী, মিলিন্দি প্রমুখ।

ফলে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরাট জয়ে এবার মোদিবিরোধীদের পালে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। আর মমতাও গত ২৮ মার্চ দেশের প্রধান বিরোধী দলগুলোকে চিঠি দিয়ে বিজেপিবিরোধী জোট গঠনের দাবি তুলেছিলেন। যদিও ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই মমতাই ইউপিএর সঙ্গ ত্যাগ করেছিলেন। তবে কংগ্রেস এই জোটে থাকবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে দ্বিমত আছে। যদি কংগ্রেস দল মমতার নেতৃত্ব মেনে নেয়, তবে এক ধরনের জোট হবে, আর না মানলে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে আরেক ধরনের জোট হবে। সেই জোটে ইউপির দু-একটা দল শরিকও হতে পারে।

এদিকে মমতার বিজয়ের পর নেট দুনিয়ায় দাবি উঠেছে, ভারতে এবার একজন বাঙালি প্রধানমন্ত্রী চাই। আর সেটি হবেন মমতা। মমতাকে সামনে রেখে নেটিজেনরা প্রচারও শুরু করেছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ছবি: এএনআই

এবারের বিধানসভা নির্বাচনে মমতার দল ২৯৪ আসনের মধ্যে ২১৩টিতে জয়ী হয়েছে। বিজেপি পেয়েছে ৭৭টি। এর আগে মমতা ২০১৬ সালের নির্বাচনে ২১১টি ও ২০১১ সালে পেয়েছিল ১৮৪টি আসন। অন্যদিকে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতার তৃণমূল পেয়েছিল ৪২ আসনের মধ্যে ২২টি এবং বিজেপি ১৮টি। ওই বছরের বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে দেখা গেছে, বিজেপি এই রাজ্যের ১২১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।

আর তৃণমূল রয়েছে ১৬৪টি আসনে। কিন্তু ভোটে সেই হিসাব উল্টে যায়। বিজেপি জেতে মাত্র ৭৭টি আসনে। কংগ্রেস এবং বাম দল জিততে পারেনি কোনো আসনে।

আবার এ বছরের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে দেখা যায়, বিজেপি লোকসভার মাত্র নয়টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। বাকি আসনে তৃণমূল। এসব হিসাব কষে এবার বিজেপিবিরোধীরা চাইছে, সামনের লোকসভা নির্বাচন মমতার নেতৃত্বে মহাজোট করে লড়ুক মোদিবিরোধীরা।

যদিও এখন মমতার অস্তিত্ব শুধু পশ্চিমবঙ্গে; এখন তিনি লোকসভার ২২টি আসনের মালিক। ভারতে লোকসভার মোট আসন ৫৪৪টি। সরকার গড়তে গেলে প্রয়োজন অন্তত ২৭৩টি আসন। তাই যদি ধরেও নেওয়া যায় এই রাজ্যের ৪২ আসনই পাবেন মমতা, তাতেও কি মমতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দেবে বিজেপিবিরোধী দলের অন্যান্য নেতারা? আবার যদি দেখা যায়, মমতার চেয়ে অন্য কোনো দল বেশি আসন পেয়ে গেছে, সে ক্ষত্রে ওই দলও তো দাবি করে বসতে পারে প্রধানমন্ত্রীর পদ। তাই বিশাল ভারতে বিভিন্ন দলের বিভিন্ন মতের কারণে বিরোধীরা একজোট হয়ে আদৌ মমতার পক্ষে থাকবেন কি না, সেটিও এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

দেখা গেছে, কেন্দ্রশাসিত কিছু অঞ্চল বাদে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এখনো ক্ষমতার পাল্লা ভারী বিজেপিরই। ভারতের ১৩টি রাজ্যে এখন ক্ষমতায় বিজেপি। এই রাজ্যগুলো হলো উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, গুজরাট, কর্ণাটক, গোয়া, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, হিমাচল, আসাম, অরুণাচল, ত্রিপুরা, মণিপুর ও পদুচেরি। কংগ্রেস ক্ষমতায় আছে তিনটি রাজ্যে—ছত্রিশগড়, পাঞ্জাব ও রাজস্থানে।

এ ছাড়া সিপিএম রয়েছে কেরালায়, তৃণমূল রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে, অন্ধ্র প্রদেশে রয়েছে ওয়াইএসআর কংগ্রেস, ওডিশায় বিজু জনতা দল, ঝাড়খন্ডে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে, তেলেঙ্গানায় তেলিঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি, বিহারে সংযুক্ত জনতা দল, মহারাষ্ট্রে শিবসেনা ও সিকিমে সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চা। তাই এতগুলো দল কি এক হতে পারবে বিজেপিবিরোধী জোটে? রাজি কি হতে পারবে প্রধানমন্ত্রী পদে মমতাকে প্রার্থী করতে? তবে সব জল্পনাকল্পনা শেষে যদি মমতার নেতৃত্বে মহাজোট গঠিত হয়েই যায়, তাহলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বিজেপির জন্য।