মমতার মন্ত্রিসভা ছাড়লেন লক্ষ্মী রতন শুক্লা

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার  লক্ষ্মী রতন শুক্লা
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মী রতন শুক্লা। আজ মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লেখা এক চিঠিতে লক্ষ্মী রতন শুক্লা জানিয়েছেন, তিনি আর রাজনীতিতে থাকতে চান না।  ফিরে যেতে চান ক্রীড়াঙ্গনে। তাই তিনি রাজনীতি থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ভারতের সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার লক্ষ্মী রতন শুক্লা। তিনি খেলার জগতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বিধানসভার নির্বাচনের আগে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। গেল মাসে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে দেন আরেক মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। এখন শুক্লাও সেই পথে হাঁটবেন কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।

কারণ, আজ মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজ এলাকা হাওড়া শহর তৃণমূলের সভাপতির পদ থেকেও অব্যাহতি নিয়েছেন শুক্লা। তাঁর এই চিঠির পর আজ এক সংবাদ সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, ‘লক্ষ্মী রতন শুক্লা রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে খেলাধুলা নিয়ে থাকতে চান। তাই ওর খেলাধুলায় থাকার কারণে আমি ওর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার অনুমতি নিয়ে তাঁর পদত্যাগ পত্রটি গ্রহণের জন্য রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

লক্ষ্মী রতন শুক্লার এই পদত্যাগের ফলে তৃণমূলের ভাঙন আরও চওড়া হলো। শুভেন্দু অধিকারীর আগে কলকাতা পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, বিধাননগর পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র সব্যসাচী দত্তসহ ১০ বিধায়কসহ (এর মধ্যে তিনজন বাম দল ও কংগ্রেসের) তৃণমূলের ৩১ জন নেতা-কর্মী সম্প্রতি তৃণমূল থেকে পদত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

লক্ষ্মী রতন শুক্লা মন্ত্রিসভা এবং তৃণমূল থেকে পদত্যাগ করলেও এই মুহূর্তে বিধায়ক পদ ছাড়ছেন না। শুক্লা বলেছেন, আসন্ন বিধানসভার মেয়াদ পর্যন্ত থাকতে চান। যোগ দিতে চান বিধানসভার অধিবেশনেও। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী মার্চ-এপ্রিলে।

লক্ষ্মী রতন শুক্লার আকস্মিক পদত্যাগে হতবাক হয়েছেন তৃণমূল নেতারা। লক্ষ্মী রতন শুক্লর অভিযোগ, তিনি স্বাধীনভাবে এবং তাঁর নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারেননি মন্ত্রিসভায়। তাই তিনি এবার অবসর চান রাজনীতি থেকে।

লক্ষ্মী রতন শুক্লার এই পদত্যাগে হতবাক হয়েছেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতা ও সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেছেন, ‘আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। ও তো কোনো দিন তাঁর অভিযোগের কথা বলেনি।’

আবার তৃণমূলের মুখপাত্র সাবেক সাংসদ কুনাল ঘোষ বলেছেন, লক্ষ্মী রতন শুক্লার পদত্যাগে দলের কোনো ক্ষতি হবে না।’

তবে কুনাল ঘোষের এ মতের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন না বালি অঞ্চলের বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া। তিনি সরাসরি শুক্লার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। শুক্লার পদত্যাগের পর বৈশালী যা বলেছেন, তা ভিন্ন তাৎপর্য বহন করে। বৈশালী বলেছেন, চেয়ারের একটি পা কাটলে পুরো চেয়ারটাই একসময় পড়ে যায়। তৃণমূলের ভেতরে থেকে উইপোকার মতো কেউ কেউ ক্ষতি করছে বলেও মন্তব্য এ বিধায়কের।

অন্যদিকে বিজেপির রাজ্য সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, দিশাহীন দল এভাবেই ভাঙবে। লক্ষ্মী রতন শুক্লকে বিজেপিতে স্বাগত।

আর কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সাংসদ অধীর চৌধুরীও বলেছেন, লক্ষ্মী রতন শুক্লার জন্য কংগ্রেসের দরজা খোলা।