মহারাষ্ট্র উত্তপ্ত, মুম্বাইয়ে ১৪৪ ধারা
হুমকি দিয়েছিলেন শিবসেনার শীর্ষ নেতারাই। বলেছিলেন, প্রয়োজনে লড়াই হবে ময়দানে। সেই অনুযায়ী প্রতিরোধ শুরুও হয়ে গেল মহারাষ্ট্রে। মুম্বাইয়ে কয়েকটি স্থানে বিক্ষুব্ধ শিবসেনা বিধায়কদের বাড়ি ও কার্যালয় আক্রান্ত হওয়ার পর আজ শনিবার জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান, সিনেমা হাউস, অফিস-কাছারি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো জায়গা ছাড়া চারজনের বেশি জমায়েত আপাতত নিষিদ্ধ। রাজনৈতিক প্ররোচনা জোগায় ও উত্তেজনা বাড়ে এমন কোনো পোস্টার, ব্যানার বা হোর্ডিংও লাগানো যাবে না। অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগে রাজ্যে কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে।
মুম্বাই পুলিশের এমন সিদ্ধান্তের কারণ শিবসেনা কর্মী-সমর্থকদের রাস্তায় নেমে পড়া। শুক্র ও শনিবার বেশ কয়েকজন বিক্ষুব্ধের বাড়ি-অফিস আক্রান্ত হয়। পুলিশের হস্তক্ষেপে বড় কোনো ঘটনা না ঘটলেও গুয়াহাটির শিবিরে থাকা বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা চিন্তিত। কারও কারও বাড়ির সামনে অবিরাম বিক্ষোভ চলছে। পরিবারের সদস্যদের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আজ পুনেতে এক বিক্ষুব্ধ বিধায়কের অফিসে হামলা হয়। বিক্ষুব্ধ নেতা একনাথ শিন্ডে গতকালই এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে চিঠি লিখে বলেন, তাঁদের সঙ্গে থাকা ৩৮ জন বিধায়কের নিরাপত্তা রাজ্য সরকার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। যদিও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
সত্যতা যা–ই হোক এটা স্পষ্ট, বিক্ষুব্ধদের মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে সংগঠনকে ব্যবহার করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। দুই দিন আগেই তিনি বলেছিলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাংলো ছেড়ে এসেছি। কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান ছাড়িনি।’ একই কথা বলেছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামী দলের মুখপাত্র সাংসদ সঞ্জয় রাউত। বলেছিলেন, প্রয়োজনে লড়াইটা হবে মুখোমুখি। ময়দানে।
বিক্ষুব্ধদের কাছে বেশি বিধায়ক থাকলেও শিবসেনায় ক্ষমতা দখলের এই লড়াইয়ে একনাথ শিন্ডে সম্ভবত কিছুটা পিছিয়ে পড়ছেন। কিংবা অন্যভাবে বলা যায়, প্রাথমিক ধাক্কা সামলে মুখ্যমন্ত্রী ঠাকরে গা ঝাড়া দিয়েছেন। শিন্ডে অনুগামীরা সবাই এখনো গুয়াহাটিতে। ফলে রাজ্যে তাঁদের অনুগামীরা ছন্নছাড়া। এই অবকাশে মুখ্যমন্ত্রী সরকার বাঁচাতে তৎপরতায় খামতি রাখছেন না। গতকালই বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার নরহরি জিরওয়াল ১৬ জন বিধায়ককে নোটিশ পাঠান। দলত্যাগ রোধ আইন অনুযায়ী কেন তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে শোকজ করা হয়।
সোমবার তাঁদের প্রত্যেককে সশরীর হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গুয়াহাটি থেকে সোমবারের মধ্যে হাজির হয়ে জবাবদিহি না করলে বেশ বোঝা যাচ্ছে শিন্ডেসহ ওই বিধায়কদের সদস্যপদ খারিজ করার পথে হাঁটতে চলেছেন বিধানসভার উপাধ্যক্ষ।
এর আগে ৩৩ জন বিক্ষুব্ধ বিধায়ক উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাঁকে ই–মেইল করেছিলেন। আইনানুগ না হওয়ায় উপাধ্যক্ষ তা খারিজ করে দেন।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওই ই–মেইল পাঠানো হয়েছিল কোনো অনামা ব্যক্তির ই–মেইল আইডি থেকে। প্রায় একই সঙ্গে গুয়াহাটি থেকে জানা যায়, বিক্ষুব্ধরা তাঁদের নতুন দলের নাম ঠিক করেছেন ‘শিবসেনা বালাসাহেব ঠাকরে’। এই নাম নথিবদ্ধ করতে তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও লিখেছেন বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর। একই নামে তাঁরা বিধানসভাতেও পরিচিত হতে চান জানিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।
এসব তৎপরতার মধ্য দিয়ে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, শিবসেনার ক্ষমতা দখলের এই লড়াই হতে চলেছে দীর্ঘমেয়াদি ও বহুমুখী। উপাধ্যক্ষ ১৬ জন বিধায়কের পদ খারিজ করে দিলে মামলা গড়াবে আদালত পর্যন্ত। দলত্যাগ আইনের ব্যাখ্যা এবং মামলার রায় চট করে হয় না। সংসদেই এই জাতীয় মামলার ফয়সালা তিন বছরেও হয়নি। কারা আসল শিবসেনা, সেই বিতর্কের মীমাংসা করবে নির্বাচন কমিশন। সেই লড়াইও দীর্ঘমেয়াদি হবে। সময় যত গড়াবে, সরকারপক্ষের ততই সুবিধা। বিক্ষুব্ধদের ধরে রাখাও এই পরিস্থিতিতে কঠিন হতে পারে। বিশেষত সরকারি মদদপুষ্ট প্রশাসন যখন বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করবে। ইতিমধ্যে প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরের নাম নিয়ে ও তাঁর আদর্শের উল্লেখ করে উদ্ধব নিচুতলার কর্মী–সমর্থকদের আবেগ উসকে দিয়ে বলেছেন, ‘যাঁরা দল ছাড়তে চান, চলে যান। আমি নতুন করে দল গড়ব।’ গতকাল এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে শিবসেনা সব ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার তুলে দিয়েছে সভাপতি উদ্ধব ঠাকরের হাতে।
একনাথ শিন্ডে এখনো অধিকাংশ বিধায়ককে ধরে রেখেছেন। কিন্তু মুম্বাই ফিরলে কী হবে, সে নিয়ে জোর জল্পনা রয়েছে। বিশেষত, আগামী সপ্তাহে শিন্ডেসহ ১৬ জনের বিধায়ক পদ খারিজ হয়ে গেলে লড়াইটা চলে যাবে আদালতে।