মিঠুন-দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন-পরবর্তী সংঘর্ষ চলছেই

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মিঠুন চক্রবর্তী ও দিলীপ ঘোষ
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বলিউড তারকা মিঠুন চক্রবর্তী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।  কলকাতা ও পুরুলিয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি মামলা করেছে তৃণমূল। রাজ্যে এসব মামলার পাশাপাশি অব্যাহত আছে নির্বাচন-পরবর্তী সংঘর্ষ।

গতকাল পুরুলিয়ার মানবাজার এলাকার বোরো থানায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন পুরুলিয়ার তৃণমূল নেতা সুজিত কুমার মাহাত। তাঁর অভিযোগ, ২৩ মার্চ পুরুলিয়ার বান্দোয়ান বিধানসভার প্রচারে এসে বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বোরো হাটতলা ময়দানে বিজেপির জনসভায় মমতাকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘বারমুডা পরুন দিদি।’

মমতা আহত হওয়ার পর এ ধরনের মন্তব্য করার প্রতিবাদে ঘটনার দেড় মাস পর এই মামলা হলো।

গত ১০ মার্চ মমতা পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নন্দীগ্রামের বিভিন্ন মন্দিরে পূজা দিয়ে ফেরার সময় নিজের গাড়ির দরজায় ধাক্কা খেয়ে আহত হন। এরপর তাঁকে ভর্তি করানো হয় কলকাতার পিজি হাসপাতালে। দুদিন চিকিৎসা নিয়ে তিনি হাসপাতাল থেকে পা প্লাস্টার করে হুইলচেয়ারে করে নির্বাচনী প্রচারে নামেন। ফলাফল ঘোষণার দিন পর্যন্ত তিনি হুইলচেয়ারে বসে প্রচার ও জনসংযোগ চালান।

হুইলচেয়ারে এভাবে নির্বাচনী প্রচারের কটাক্ষ করে ২৩ মার্চ দিলীপ ঘোষ মমতাকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘প্লাস্টার কাটা হয়ে গেল। ক্রেপ ব্যান্ডেজ বাঁধা হলো। আর পা তুলে তা সবাইকে দেখাচ্ছেন। শাড়ি পরে আছেন। একটা পা ঢাকা আর একটা খোলা। এই রকম শাড়ি পরা আমি কাউকে দেখিনি। যদি পা–টা বের করেই রাখতেন, তবে শাড়ি কেন, বারমুডা পরতে পারেন। তাহলে তা পরিষ্কার দেখা যায়।’ দিলীপ ঘোষের এই অশালীন মন্তব্য তৃণমূলে আঘাত করেছে। তাই বাদী এই বেফাঁস মন্তব্যের জন্য আইনের আশ্রয় নিয়ে এফআইর দায়ের করেছেন।

গতকালই আবার কলকাতার মানিকতলা থানায় বলিউড তারকা মিঠুন চক্রবর্তী ও দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। এখানে অভিযোগ করা হয়েছে, মিঠুন চক্রবর্তী ও দিলীপ ঘোষ নির্বাচনী প্রচারে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে তৃণমূলকে হেয় করেছেন। রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত করেছেন। ভোটে হিংসার প্রশ্রয় দিয়েছেন। উত্তর কলকাতার যুব তৃণমূল কংগ্রেস মানিকতলা থানায় এই অভিযোগ এনে এফআইআর করে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ছবির ডায়ালগ আউড়িয়ে সাধারণ মানুষকে উসকানি দিয়েছেন। তৃণমূলকে হেয় করেছেন।

আবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের সময় কোচবিহারের শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় বলেছিলেন, জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।

মিঠুন চক্রবর্তী গত ৭ মার্চ কলকাতার মোদির ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দিয়ে মোদির হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন। ব্রিগেড সমাবেশে মিঠুন দর্শকদের আবেদনে সাড়া দিয়ে তার ‘এমএলএ ফাটাকেস্ট’ ছবির ডায়ালগ শুনিয়ে বলেছিলেন, ‘মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে’। এরপরই মিঠুন ফের যোগ করে বলেন, এবার আমি নতুন আর একটি ডায়ালগ দেব, সেই ডায়ালগ নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামব। ‘আমি জলঢোঁরা নই, বেলেবোরাও নই, আমি জাত গোখরো, এক ছোবলেই ছবি’।

নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষ অব্যাহত

গত রোববার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনের ফল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই রাজ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষে মারা যায় ১৪ জন। এর মধ্যে বিজেপির ৯ জন, তৃণমূলের ৪ জন এবং আইএসএফের ১ জন। আর বুধবার মারা যায় বিজেপির আরও ২ জন সমর্থক। এদিকে গতকাল কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন পশ্চিম মেদিনীপুরের পাঁচখুড়ি এলাকায় সংঘর্ষকবলিত এলাকা পরিদর্শনের জন্য ঘাটাল হয়ে যাওয়ার পথে একদল দুষ্কৃতি মন্ত্রীর গাড়িতে হামলা চালায়। ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে মন্ত্রীর গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। তিনিও ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষের তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত দল পাঠায়। তারা তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।

গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘কেন আসছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও নেতারা এই বাংলায় উসকানি দিতে? ওরা তো শান্তির বাংলাকে অশান্তি করার চক্রান্ত করছে।’ মমতা আরও বলেছেন, নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এই রাজ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর অর্ধেক তৃণমূলের। মমতা দলমত-নির্বিশেষে নিহত ওই ১৬ পরিবারে ২ লাখ রুপি করে আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।

একই সঙ্গে তিনি ১০ এপ্রিল কোচবিহারের শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিহত ৪ জনের মৃত্যুর তদন্তের জন্য রাজ্যের সিআইডির ডিআইজির নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত টিম বা সিট গঠন করেছেন।

এদিকে রাজ্যব্যাপী নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল কোচবিহারে তৃণমূল নেতা ও সাবেক বিধায়ক উদয়ন গুহর ওপর হামলা হয়েছে। তাঁর হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। উদয়ন গুহ এবার তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে পরাস্ত। অন্যদিকে আজই আবার কোচবিহারের দিনহাটায় বিজেপির এক নেতার গাড়ি ভাঙচুর করেছে তৃণমূল। হামলাও হয়েছে দুই বিজেপি নেতার ওপর।

গতকাল কলকাতার যাদবপুরে বিজেপির প্রার্থী রিঙ্কু নস্করের বাড়িতে হামলা হয়েছে।