মোদির টিকা নীতির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির টিকা নীতির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারই। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সরকারি পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, বেসরকারি হাসপাতালকে দেওয়া টিকার অধিকাংশ অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। কারণ, টিকার অত্যধিক দাম এবং বিভিন্ন টিকার দামের মধ্যে ফারাক। এর ফলে টিকা নষ্টের আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে।
মোদি সরকারের টিকা নীতি বারবার বদলেছে। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, ৪৫-এর বেশি বয়সীদের টিকার দায় পুরোপুরি কেন্দ্র নেবে। ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। ১ মে থেকে ওই নীতি চালু হওয়ার পর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে সরবরাহ করা টিকার দামের তারতম্য ঘটে। এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিলে সুপ্রিম কোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে টিকা নীতির শুনানি শুরু করেন। কেন গোটা দেশে এক নীতি গৃহীত হবে না, সেই প্রশ্ন তুলে বিচারপতিরা বুঝিয়ে দেন, এই বিভেদ মোটেই কাম্য নয়। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই মোদি নতুন নীতির কথা ঘোষণা করেন। তাতে বলা হয়, ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদেরও টিকার দায়িত্ব নেবে কেন্দ্র। ২১ জুন তা চালু হবে।
এই নীতিতে বলা হয়েছে, ৭৫ শতাংশ মানুষকে বিনা মূল্যে টিকা দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্র নেবে। ২৫ শতাংশ সচ্ছল মানুষ, যাঁরা টাকা খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে টিকা নিতে ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হবে। এত দিন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল একই টিকার বিভিন্ন ধরনের দাম নিচ্ছিল। সরকারের নতুন নীতিতে টিকার দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সার্ভিস চার্জসহ ‘কোভিশিল্ড’ টিকার জন্য বেসরকারি হাসপাতাল ৭৮০ রুপির বেশি নিতে পারবে না। ‘কোভ্যাক্সিন’-এর দাম পড়বে ১ হাজার ৪১০ রুপি ও রাশিয়ার ‘স্পুতনিক-ভি’ টিকার দাম ১ হাজার ১৪৫ রুপি।
এই নীতি চালু হওয়ার আগে বেসরকারি হাসপাতালে একই টিকা একেক দামে বিক্রি হচ্ছিল। নতুন নীতিতে সেই অবকাশ থাকছে না। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, গত মে মাসে দেশে মোট ৭ কোটি ৪০ লাখ ডোজ টিকা ছাড়া হয়েছিল। এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে দেওয়া হয়েছিল ১ কোটি ৮৫ লাখ ডোজ। অথচ ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র ২২ লাখ। এই অনাগ্রহের মূল কারণ টিকার অত্যধিক দাম।
ভারতে কোভিডের কারণে বেকারত্ব বেড়েছে। ৯৭ শতাংশ মানুষের আয়ও কমেছে। এই অবস্থায় পরিবারের একেকজনের টিকার জন্য ডোজপ্রতি ৭৮০ রুপি খরচ করাটা ব্যয়বহুল। সে কারণে অধিকাংশ মানুষই সরকারি টিকার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। দামের জন্য বেসরকারি স্তরে টিকা দেওয়ার প্রবণতা কমলে অপচয়ের আশঙ্কাও বেড়ে যাবে। অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার টিকার অপচয় বন্ধের ওপর জোর দিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারের কাছে স্বস্তির বিষয় সংক্রমণের সংখ্যা হ্রাস। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৮৩৪, যা কিছুদিন আগেও ৪ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু চিন্তার বিষয় মৃত্যুর হার। সংক্রমণ এক-চতুর্থাংশ কমলেও মৃত্যু সেই হারে কমেনি। দৈনিক সাড়ে ৪ হাজারের মতো জায়গায় গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যান ৩ হাজার ৩০৩ জন।
ভারতে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা কম করে দেখানোর একটা অভিযোগ রয়েছেই। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এ-সংক্রান্ত রিপোর্ট করার পর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করে বলেছিলেন, ‘পরিসংখ্যান নয়, অসত্য বলে সরকার।’ তারপরই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন রাহুলকে আক্রমণ করে ‘শকুন’ ও ‘লাশের রাজনীতিক’ আখ্যা দেন। সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকাও এই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এক প্রতিবেদনে বলেছে, ভারত সরকার কোভিডে মৃত্যুর যে খতিয়ান দেখাচ্ছে, বাস্তবে তা ৫ থেকে ৭ গুণ বেশি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন ওই দাবিকেও অসত্য বলেছেন। শনিবার টুইট করে তিনি বলেন, ওই প্রতিবেদন অনুমানের ওপর ভিত্তি করে লেখা। সন্দেহের সপক্ষে বিজ্ঞানসম্মত কোনো প্রমাণ নেই। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহামারিতে মৃত্যু পরিসংখ্যানে কিছুটা হেরফের ঘটতেই পারে। তবে তা এত বিপুল হয় না। সম্প্রতি বিহার সরকার রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। যদিও উত্তর প্রদেশসহ অনেক রাজ্য এখনো নীরব।