অশান্ত লাদাখ, রাজনাথ দায়ী করলেন চীনকে

ফাইল ছবি
রয়টার্স

পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) অশান্ত করে তোলার দায় পুরোপুরি চীনের ওপর চাপালেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় গত শুক্রবার রাতে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্ঘিকে এ কথা জানিয়ে রাজনাথ বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিবাদের মীমাংসায় যেসব চুক্তি রয়েছে, তার আধারেই সর্বস্তরে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিবাদের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার পথ খুঁজতে হবে।
শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য আলোচনার ওপর জোর দিলেও ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চীনা প্রতিনিধিদলকে জানিয়ে দেন, এলএসিতে ভারতীয় সেনা দায়িত্বশীল আচরণ করে চলেছে। তবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে ভারতীয় সেনারা কোনো আপস করবে না।
শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত চলা ওই বৈঠক শেষ হওয়ার পর চীনও যাবতীয় অশান্তির দায় ভারতের ওপর চাপিয়েছে। আজ শনিবার চীন সরকারিভাবে বলে, সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করা এবং তা জিইয়ে রাখার জন্য ভারতই দায়ী। তারা এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে রাজি নয়।

মস্কোয় সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে রাজনাথ সেখানে গেছেন। ওই শহরে হাজির ওয়েই ফেঙ্ঘিও। সম্মেলনের অবসরে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগ্রহ দেখিয়েছিলেন ওয়েই ফেঙ্ঘি। প্রথমে ভারত অরাজি হলেও প্যাংগং লেকের দক্ষিণাঞ্চলে চীনা আগ্রাসন ঠেকিয়ে উঁচু অবস্থানগুলো দখলে আনার পর ভারত বৈঠকে বসতে রাজি হয়।
আজ শনিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই বৈঠক নিয়ে এক বিবৃতি প্রচার করে। তাতে বলা হয়েছে, এলএসিতে শান্তি ফেরাতে হলে চীনকে অগ্রবর্তী সেনাদের পিছিয়ে নিতে হবে এবং সেনাসংখ্যা হ্রাস করতে হবে। রাজনাথ বলেছেন, জুন মাসের আগে এলএসিতে গলওয়ান উপত্যকাসহ সর্বত্র চীনা ফৌজের অবস্থান যেখানে ছিল, তাদের সেখানে ফিরে যেতে হবে। স্থিতাবস্থা বজায় রাখা জরুরি। বৈঠকে তিনি বলেন, চীন শুধু বাড়তি সেনা সমাবেশই ঘটায়নি, আগ্রাসী হয়ে তারা একতরফাভাবে স্থিতাবস্থা পরিবর্তনেরও চেষ্টা করেছে। তা করতে গিয়ে চীন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও যাবতীয় বোঝাপড়া ভঙ্গ করেছে। রাজনাথ স্পষ্ট করে জানান, তুলনায় ভারতীয় বাহিনী দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে কেউ যেন ভারতীয় বাহিনীর যোগ্যতাকে সন্দেহ না করে।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বোঝাপড়াকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানান। বলেন, দুই রাষ্ট্রনায়কের বোঝাপড়া ও সমঝোতার ভিত্তিতেই আলোচনার মাধ্যমে বিবাদের মীমাংসা করা প্রয়োজন। বলেছেন, প্ররোচনামূলক কিছু করা ঠিক নয়। সর্বস্তরে বাক্যালাপ চালিয়ে যাওয়ার ওপর তিনি জোর দেন।
পূর্ব লাদাখসহ দীর্ঘ এলএসিতে চীন কখনো ভারতের বিরুদ্ধে বোঝাপড়া ভঙ্গের অভিযোগ আনেনি। এমনকি, গত ১৫ জুন গলওয়ান সংঘর্ষের পরেও নয়। এলএসি লঙ্ঘনের অভিযোগ সব সময় ভারতই আগে এনেছে। এই প্রথম চীন অভিযোগ করল ভারতের বিরুদ্ধে। তাদের এই সুর নরম করার পেছনে প্যাংগং লেকের দক্ষিণাঞ্চলে ভারতের সুবিধাজনক অবস্থানকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। গত শনি ও সোমবার রাতে চীনা আগ্রাসন রুখে ভারতীয়রা ‘কালা টপ’, ‘হেলমেট’, ‘মুকপুরি’ বা ‘রেজাংলার’—সব কটি উঁচু এলাকা দখল নেওয়ার পর চীনা সৈন্যদের উপস্থিতি স্পষ্ট নজরে চলে আসার দরুণ তারা অস্বস্তিতে পড়েছে। স্থিতাবস্থা রক্ষায় চীন তাই সরব।

পূর্ব লাদাখের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে অরুণাচল প্রদেশেও চীন অশান্তি সৃষ্টি করছে বলে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক নিনং এরিং। শনিবার তিনি অভিযোগ করেন, ওই দিন ভোরে আপার সুবর্ণসিরি জেলার নাচো সার্কল এরিয়া থেকে চীনা সেনাবাহিনী পাঁচ স্থানীয় যুবককে অপহরণ করেছে। অপহৃত যুবকদের সবাই স্থানীয় তাজিন সম্প্রদায়ের মানুষ। অপহৃত এক যুবকের বড় ভাই টুইট মারফত এ অভিযোগ করেছেন। তাঁদের হদিস পেতে সেনাবাহিনীর সাহায্য চাওয়া হয়েছে। অপহৃত যুবকেরা জঙ্গল থেকে উধাও হন। ওই এলাকা থেকে এলএসি বহু দূর। অরুণাচলের বিস্তীর্ণ এলাকা চীন তাদের বলে দাবি করে।
মস্কো বৈঠকে সমাধান সূত্রের খোঁজ মেলেনি। এখানেই ১০ তারিখে ভারত ও চীনের দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী যথাক্রমে এস জয়শঙ্কর ও ওয়াং ই মুখোমুখি হবেন। সেটা আরও একটি সুযোগ।