ভারত
রাজ্যসভায় বিশৃঙ্খলায় কাঁদলেন উপরাষ্ট্রপতি
লোকসভার অধিবেশন মেয়াদ পূর্তির আগেই শেষ। টেবিলে দাঁড়িয়ে, বসে কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান। ফাইলপত্র ছোড়াছুড়ি, কাঁদলেন উপরাষ্ট্রপতি।
দিনের পর দিন অচলাবস্থার দরুন ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন মেয়াদ পূর্তির আগেই শেষ করে দেওয়া হলো। উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার হালও হতে চলেছে তথৈবচ। এই কক্ষের চেয়ারম্যান উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু গতকাল বুধবার বিবৃতি দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। বলেন, ‘মঙ্গলবার সভায় যে কাণ্ড হয়েছে, তাতে সারা রাত আমি ঘুমাতে পারিনি।’
সরকার ও বিরোধী দুই পক্ষের অনমনীয় মনোভাবের জেরে বর্ষাকালীন অধিবেশনের শুরু থেকে প্রতিদিন সংসদের দুই কক্ষের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়েছে। মঙ্গলবার রাজ্যসভায় তা মাত্রাছাড়া হয়ে যায়। সভাধ্যক্ষের আসনের সামনে রাখা ‘রিপোর্টার্স টেবিল’, যেখানে সভার সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে বসেন সংসদের কার্যবিবরণী লিপিবদ্ধকারী কর্মীরা, তার ওপর উঠে পড়েন কোনো কোনো সাংসদ। টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে ও বসে তাঁরা কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। টেবিলে রাখা নিয়মবিধি সম্পর্কিত বই ও ফাইলপত্র ছুড়ে মারেন সভাধ্যক্ষের আসনের দিকে। সভা তৎক্ষণাৎ মুলতবি করে দেওয়া হয়। মঙ্গলবারের ওই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে গতকাল কেঁদে ফেলেন চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডু। বলেন, ‘বিরোধীরা সংসদের পবিত্রতা নষ্ট করেছেন। গণতন্ত্রের পীঠস্থানে যা ঘটেছে, তার পরিণতি ভেবে আমি ভীত ও শঙ্কিত। সারাটা রাত আমি ঘুমাতে পারিনি।’
সংসদীয় সূত্রের খবর, বিরোধী সদস্যদের যাঁরা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১৩ আগস্ট সংসদের চলতি অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা। তার আগেই গতকাল লোকসভা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজ্যসভাও বন্ধ হতে চলেছে মেয়াদ পূর্তির আগেই।
বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হয় ১৯ জুলাই। তার ঠিক আগের দিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় পেগাসাস-কাহিনি। বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি, কোভিড পরিস্থিতি, দেশজুড়ে বেকারত্ব, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, পেট্রোপণের আকাশছোঁয়া দর, অর্থনৈতিক অবনমন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে ‘সরকারি ঔদাসীন্যে’ বিরোধীরা ক্ষুব্ধ। এর মধ্যে পেগাসাসের মাধ্যমে সর্বস্তরের নাগরিকের ওপর সরকারি নজরদারি ও ফোনে আড়ি পাতার ঘটনা তাঁদের ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতির শামিল হয়ে দাঁড়ায়। প্রধানত পেগাসাস ও কৃষি আইন নিয়ে বিরোধীরা আলোচনার দাবি জানাতে থাকেন শুরুর দিন থেকেই। অথচ সরকার অনড়। এই সরকারি অনাগ্রহ বিরোধীদের আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে। প্রতিদিন বিরোধীদের সরব প্রতিবাদ চলতে থাকে। সেই সুযোগে সরকার একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বিল বিনা বাধায় পাস করিয়ে নেয়। রাজ্যসভার তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য ডেরেক ওব্রায়ান টুইট মারফত জানান, এক একটি বিল পাস করতে সরকার সময় নিয়েছে এক থেকে সাত মিনিট! তাঁর কটাক্ষ, ‘বিল পাস, নাকি পাপড়ি চাট তৈরি হচ্ছে?’
সংসদীয় এই অচলাবস্থার পূর্ণ দায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চাপিয়েছেন বিরোধীদের ওপর। দলীয় বৈঠকে বিরোধীদের ‘অগণতান্ত্রিক আচরণের’ নিন্দা করে তিনি বলেন, জনগণের কাছে বিরোধীদের এই চরিত্র তুলে ধরতে হবে। বিরোধীরাও পাল্টা বলেন, যে প্রধানমন্ত্রী সাত বছরে সংসদে বিরোধীদের একটিও প্রশ্ন করতে দেননি, কোনো কক্ষে একটি প্রশ্নেরও জবাব দেননি, অধিবেশন চলাকালে কক্ষেও হাজির থাকেন না, তাঁর মুখে গণতন্ত্রের গুণগান শোভা পায় না। গতকাল লোকসভা মুলতবি হওয়ার ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী সভায় ঢোকেন। সভা অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি হয়ে যাওয়ার পর কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজ প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে সভায় দেখলাম। যখন সব শেষ, তখন তাঁর আগমন!’
সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ অন্তহীন। দুই কক্ষের অধিবেশন সরাসরি সম্প্রচারিত হয় সংসদ পরিচালিত লোকসভা ও রাজ্যসভা টিভিতে। সেখানেও বিরোধীদের গণতান্ত্রিক বিক্ষোভ দেখানো হয় না। অভিযোগ, বিরোধীরা সরকারের সমালোচনা করলেই তাঁদের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি দেখা গেছে, লোকসভায় পৌনে এক ঘণ্টার সম্প্রচারে বিরোধীদের দেখানো হয়েছে মাত্র ৭২ সেকেন্ড! বুধবার লোকসভার অধিবেশন বন্ধ করে দেওয়ার ঠিক আগে স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, আশানুরূপ কাজ না হওয়ায় তিনি দুঃখিত।