রাহুল গান্ধীও ছিলেন পেগাসাসের নজরদারিতে

রাহুল গান্ধী
রয়টার্স ফাইল ছবি

ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপের তৈরি করা সফটওয়্যার ‘পেগাসাস’ ব্যবহার করে ভারতের যাঁদের ওপর নজরদারি করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও রয়েছেন। নজরদারি করতে তাঁকে দুই–দুইবার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার যাঁদের ওপর নজরদারি করছিল, তাঁদের মধ্যে রাজনীতিক যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও সরকারের সমালোচকেরা।  

২০১৯ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের হয়ে নেতৃত্ব ছিলেন রাহুল গান্ধী। এই নির্বাচনে ভোট গ্রহণের এক বছর আগে থেকে তাঁর ওপর নজরদারি করা হচ্ছিল। গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, রাহুলের দুই ফোন নম্বর নজরদারির আওতায় ছিল।

শুধু রাহুল নন, গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ পাঁচজন এবং কংগ্রেসের আরও কয়েকজন নেতার ফোনও নজরদারিতে ছিল।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে আড়ি পাতার ঘটনা গত রোববার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্টসহ ১৭টি সংবাদমাধ্যম একযোগে প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, মূলত স্মার্টফোনে আড়ি পাতার কাজে এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেছে কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর সরকার।

পেগাসাসের গ্রাহকের নাম প্রকাশ করে না নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ। তবে ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, যেসব দেশে ফোনে আড়ি পাতার কাজে পেগাসাস ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেই তালিকায় আছে আলজেরিয়া, বাহরাইন, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কানাডা, মিসর, ফ্রান্স, গ্রিস, ভারত, ইরাক, ইসরায়েল, আইভরি কোস্ট, জর্ডান, কাজাখস্তান, কেনিয়া, কুয়েত, কিরগিজস্তান, লাটভিয়া, লেবানন, লিবিয়া, মেক্সিকো, মরক্কো, নেদারল্যান্ডস, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, পোল্যান্ড, কাতার, রুয়ান্ডা, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, টোগো, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উগান্ডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, উজবেকিস্তান, ইয়েমেন ও জাম্বিয়া। তবে কোনো দেশে ফোনে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের উপস্থিতি পাওয়ার অর্থ এই নয় যে সে দেশের সরকার সফটওয়্যারটির গ্রাহক।

পেগাসাস স্পাইওয়্যার একধরনের ম্যালওয়্যার। এর মাধ্যমে আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সব বার্তা, ছবি, ই-মেইল, কল রেকর্ড হাতিয়ে নেওয়া যায়। এই ম্যালওয়্যার ব্যবহারকারীর অগোচরেই স্মার্টফোনের মাইক্রোফোন ও ক্যামেরা চালু করে দেয়। এর মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, সিগন্যালের মতো এনক্রিপটেড (আদান-প্রদান করা বার্তা শুধু প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে) মেসেজিং অ্যাপের বার্তাগুলোও নজরদারির আওতায় চলে আসে।

পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বা চেষ্টা করা হয়েছে, এমন ৫০ হাজারের বেশি ফোন নম্বর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর হাতে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে এনএসওর গ্রাহকেরা এসব নম্বরে আড়ি পেতে থাকতে পারেন।

৫০ হাজার ফোনের এই তালিকা প্রথম হাতে পায় প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংবাদ সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ। পরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় বিশ্বের ১৭টি সংবাদমাধ্যম মিলে চালায় যৌথ তদন্ত, যার নাম পেগাসাস প্রজেক্ট। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) যেমন যৌথভাবে পানামা পেপার্স প্রকাশ করেছিল, ঠিক তেমনই যৌথ উদ্যোগ পেগাসাস প্রজেক্ট।
ভারতের নিউজ পোর্টাল দ্য ওয়্যার বলছে, এই ফোন নজরদারির আওতায় সে দেশের অন্তত ৩০০ রাজনীতিক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও বিজ্ঞানীর নাম রয়েছে। এ তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও রয়েছে। রয়েছে বিজেপির দুই মন্ত্রী প্রহ্লাদ প্যাটেল ও অশ্বিনী বৈষ্ণর নামও।

ভারতের অন্তত ৪০ সাংবাদিকের নাম আড়ি পাতার তালিকায় থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দ্য ওয়্যার আপাতত যে তালিকা উদ্‌ঘাটন করেছে, তাতে দ্য ওয়্যারের দুই সম্পাদক ও তিন সাংবাদিকের নাম রয়েছে।