শঙ্খ ঘোষের শেষকৃত্য আজই, শোকের ছায়া সর্বত্র

কবি শঙ্খ ঘোষ
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

অনাড়ম্বরভাবেই জীবন যাপন করেছেন কবি শঙ্খ ঘোষ। কোনো বাহুল্য তাঁর অপছন্দ ছিল। কবির স্বজনদেরও ইচ্ছা, অনাড়ম্বরভাবেই হোক তাঁর শেষকৃত্য। আর সেই ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে চায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। কবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষবিদায় জানানো হবে বটে, তবে সেখানে হবে না কোনো তোপধ্বনি। আজ বুধবার বিকেলে শঙ্খ ঘোষের শেষকৃত্য হচ্ছে কলকাতার নিমতলা মহাশ্মশানে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে আজ সকালে কবি শঙ্খ ঘোষের জীবনাবসান হয় কলকাতায় তাঁর নিজ বাসভবনে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি তাঁর বাসভবনে হোম আইসোলেশনে ছিলেন।

আজ বেলা দুইটায় শঙ্খ ঘোষের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে নিমতলা মহাশ্মশানে। সেখানে তাঁর শেষকৃত্য হবে। কবির শেষকৃত্যের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শোকবার্তায় বলছেন, ‘শঙ্খদা গানস্যালুট (তোপধ্বনি) পছন্দ করতেন না। সেটা বাদ রাখছি।’

কোভিডের বিধি মেনেই এ শেষকৃত্য হবে। কবির স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত। তাঁর মেয়ের পরিবারও করোনায় আক্রান্ত। তাই আজ কবিকে অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে কাউকে বাসভবনে আসতে যেতে দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন

কবি শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে কলকাতা সাহিত্যজগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। তাঁদের কথা, দেশ আজ এক মহান কবিকে হারাল।

এদিকে শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে কলকাতার প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলা সাহিত্যে এক শূন্যতার সৃষ্টি হলো। তিনি কথা বলতেন কম, শুনতেন বেশি। নবীন ও তরুণদের তিনি ছিলেন আদর্শ। ছিলেন খুব সহজ ও সরল প্রকৃতির এক মানুষ।

কবি শঙ্খ ঘোষ
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কবি সুবোধ সরকার বলেছেন, বাংলা সাহিত্য শঙ্খ ঘোষের কাছে চিরঋণী হয়ে রইল। বাংলা কবিতাকে তিনি উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যকে তিনি বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

সংগীতশিল্পী কবির সুমন বলেছেন, ‘রাজ্যের প্রথিতযশারা ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছেন। এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট ক্ষতি। আমাদের বাংলা সাহিত্যের এক নক্ষত্রের পতন হলো আজ।’

নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘শঙ্খ ঘোষ ছিলেন এক বিরাট মাপের উঁচুমানের এক কবি। আমাদের ভরসা দেওয়ার এক মানুষ। আমরা তাঁর অভাব অনুভব করব আমাদের প্রতিটি কাজে। প্রতিটি চিন্তায়।’

নাট্যকার ব্রাত্য বসু বলেছেন, একটা যুগের অবসান হলো। কবি শঙ্খ ঘোষ মানেই একটা স্বতন্ত্র যুগ। যত দিন বাঙালি থাকবে, তত দিন তাঁর সৃষ্টি অমর হয়ে থাকবে।

নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী শঙ্খ ঘোষকে ‘বাঙালিদের একজন অভিভাবক’ বলে আখ্যায়িত করেন। বিভাস বলেন, ‘তাঁর শূন্যতায় আমরা আমাদের অভিভাবক হারালাম।’

নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন বলেছেন, কবি শঙ্খ ঘোষ শাসকের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কথা বলতেন, সাহস জোগাতেন।

কবি জয় গোস্বামী বলেছেন, ‘কবি শঙ্খ ঘোষ ছিলেন জাতির বিবেক। আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’