শান্তিনিকেতন অশান্ত

শান্তিনিকেতন ভবন।ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতন অশান্ত হয়ে পড়েছে। শান্তিনিকেতনের ঐতিহাসিক পৌষ মেলার মাঠ প্রাচীর দিয়ে ঘেরাকে কেন্দ্র করে গত সোমবার থেকে অশান্ত হয়ে পড়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আজও শান্তিনিকেতন থমথমে।

আদালতের আদেশ নিয়ে পৌষ মেলার মাঠ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা শুরু হলে শান্তিনিকেতনের একাংশ মানুষ চাইছিল না, উন্মুক্ত মাঠকে ইট-কংক্রিটের বাঁধনে আটকে দিতে। তারা চেয়েছিল, কবিগুরুর স্বপ্নের পৌষ মেলার মাঠ খোলামেলা থাকুক। মানুষ এখানে যেভাবে আসছে, সেভাবেই আসুক। উন্মুক্ত হাওয়ায় অবগাহন করুক।
কিন্তু গত শনিবার পৌষ মেলার মাঠকে প্রাচীর দিয়ে আটকানোর কাজ শুরু হলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকাবাসী, ছাত্রসমাজ ও প্রাক্তনীরা। তারা দাবি তোলে, কোনোক্রমেই এখানে গড়তে দেওয়া হবে না প্রাচীর।

গত সোমবার এখানে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হলে বাধা দেয় স্থানীয় লোকজন। তারা মিছিল করে বন্ধ করে দেয় সীমানাপ্রাচীর গড়ার কাজ। শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা এবং সীমানাপ্রাচীর গড়ার কারিগর ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ। এতে নেতৃত্ব দেন তৃণমূল বিধায়ক নরেশ বাউরি, বোলপুর পৌরসভার দুই বিদায়ী কাউন্সিলর শেখ ওমর ও সুকান্ত হাজরা। এই সময় ব্যাপক ভাঙচুর হয় বিশ্বভারতীতে। অফিসের তালা ভেঙে চলে ভাঙচুর। পে লোডার এনে ভেঙে দেওয়া হয় বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী গেট।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ভাঙচুরের অভিযোগে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। তাদের গ্রেপ্তারও করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার তাঁদের বোলপুর আদালতে তোলা হয়। আদালত তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে দুই দিনের পুলিশ হেফাজত দেন।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পৌষ মেলা মাঠ
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিধায়ক নরেশ বাউড়ি, কাউন্সিলর ওমর শেখ, সুকান্ত হাজরাসহ নয়জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তাঁরা বেআইনি জমায়েত, ভাঙচুর, সম্পত্তি চুরি ও অনধিকার প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে বহু সম্পত্তি বিনষ্ট করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোমবারের ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়েছে। এই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিচ্ছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে তারা ১২ ঘণ্টার রিলে অনশন করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ এই অনশন হওয়ার কথা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তারা আগেভাগে পুলিশকে অবহিত করেছে। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি। প্রশাসনও জারি করেনি ১৪৪ ধারা।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি তুলে ধরেছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রক ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

অন্যদিকে, বোলপুরের ব্যবসায়ী ঋক রায় গতকাল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, অধ্যাপক বিপ্লব লৌহ চৌধুরী, অধ্যাপক রামপ্রসাদ দাস, অধ্যাপক শান্তনু রায়সহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে বেআইনি জমায়েতসহ একাধিক অভিযোগে একটি মামলা করেছেন শান্তিনিকেতন থানায়।

বিশ্বভারতীর সম্পদ বিনষ্ট ও বহিরাগত এনে হামলা চালানোর অভিযোগে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছেন আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার। তিনি হাইকোর্টের নজরদারিতে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছেন।

ঘটনার পর শান্তিনিকেতনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, স্বতঃস্ফূর্তভাবে শান্তিনিকেতনে প্রাচীর দেওয়ার আন্দোলন করেছে স্থানীয় লোকজন।

গতকাল বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, এবার বিশ্বভারতীকে পার্টি অফিস করতে চাইছে তৃণমূল।
বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেছেন, আদালত এমন নির্দেশ দেননি যে ইট দিয়ে প্রাচীর গড়তে হবে।

জেলা প্রশাসন এই নিয়ে বিশেষ বৈঠক ডাকলেও সেখানে উপস্থিত থাকছেন না বিশ্বভারতী উপাচার্যসহ প্রতিনিধিরা। গতকাল এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।