শাহরুখপুত্রকে গ্রেপ্তার করা বানখেড়ে এখন নিজেই ভয়ে

শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ানসহ বেশ কয়েকজন বলিউড তারকার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছেন সমীর বানখেড়ে
ছবি: এএনআই

বলিউড তারকা শাহরুখ খান ও আরও কয়েকজন বলিউড তারকার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে আলোচনায় রয়েছেন ভারতের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর (এনসিবি) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সমির বানখেড়ে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের এক মন্ত্রী অভিযোগ তুলেছেন, এই কর্মকর্তা মানুষকে ভুয়া মামলায় ফাঁসাচ্ছেন। তবে এবার এক চিঠিতে নিজেই মিথ্যা মামলায় ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা জানিয়েছেন বানখেড়ে। খবর এনডিটিভির।

মুম্বাই পুলিশ প্রধানের কাছে লেখা এক চিঠিতে বানখেড়ে অভিযোগ করেছেন, উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে চাকরিচ্যুত করার ও কারাগারে পাঠানোর হুমকি পেয়েছেন তিনি। আশঙ্কা জানিয়েছেন, বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে তাকে ফাঁসানো হতে পারে। আর এ ধরনের মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নিতে মুম্বাই পুলিশ প্রধানের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বানখেড়ে।

বানখেড়ের এ বিবৃতিকে ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির নেতা ও মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিকের সাম্প্রতিক বক্তব্যের পাল্টাজবাব বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে বক্তব্য দেন নবাব মালিক। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, এক বছরের মধ্যে চাকরি হারাতে পারেন বানখেড়ে। মালিক বলেন, ‘তাদের (বিজেপি) একটি পুতুল আছে, বানখেড়ে তাঁর নাম। তিনি মানুষের বিরুদ্ধে আজেবাজে মামলা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমি চ্যালেঞ্জ করতে পারি, বানখেড়ে এক বছরের মধ্যে চাকরি হারাবেন। ভুয়া মামলাগুলোর প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।’

৯ মাস আগে এই এনসিবি কর্মকর্তার হাতেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নবাব মালিকের জামাতা সমীর খান। সেবারও মাদক ইস্যুতেই চালানো হয়েছিল অভিযান। নবাব মালিক নিজেই পরে আরিয়ানের গ্রেপ্তারের বিষয়ে একাধিক অভিযোগ তোলেন। তাঁর অভিযোগ, মাদকসংক্রান্ত বিষয়ে মুম্বাইয়ে ধরা পড়ার পরও বিজেপি নেতার ঘনিষ্ঠ একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নবাব মালিকের দাবি, কর্ডেলিয়াতে যে তল্লাশি হবে, অনেক আগে থেকেই তা পরিকল্পিত। যদিও এনসিবির পক্ষ থেকে সব অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়।

তবে মুম্বাই পুলিশ প্রধানের কাছে লেখা চিঠিতে বানখেড়ে নির্দিষ্ট করে কারও নাম উল্লেখ করেননি। শুধু বলেছেন, ‘অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি’রা তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

এর আগে স্থানীয় সময় গতকাল রোববার এক সাক্ষী বানখেড়ের তদন্তাধীন মাদক মামলায় প্রভাকর সেইল নামের এক সাক্ষী দাবি করেছেন, ৩ অক্টোবর রাতে সন্দেহভাজন বেসরকারি তদন্তকারী কেপি গোসাভি ও স্যাম ডিসুজার মধ্যকার কথোপকথন শুনেছেন তিনি। হলফনামায় প্রভাকর দাবি করেছেন, ১৮ কোটি রুপিতে গোটা মামলা রফা করার ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছিল। এর মধ্যে আট কোটি রুপি এনসিবির কর্মকর্তা সামির বানখেড়েকে দেওয়ার কথা হয়েছিল।

জেল হেফাজতে শাহরুখপুত্র আরিয়ানের সঙ্গে সেলফি তুলে আলোচিত হয়েছিলেন কেপি গোসাভি। এর পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। প্রভাকর সেইল হলেন এই কেপি গোসাভির ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। মাদকসংশ্লিষ্ট ওই মামলায় ৯ সাক্ষীর একজন তিনি।

হলফনামায় প্রভাকর আরও লিখেছেন, ওই দিন রাতে কেপি গোসাভি, স্যাম ডিসুজা ও শাহরুখ খানের ম্যানেজার পূজা দাদলানি একটি গাড়ির ভেতরে বসে ১৫ মিনিট ধরে আলোচনা করেছেন। প্রভাকর আরও দাবি করেছেন, কেপি গোসাভির নির্দেশে দুই ব্যাগ টাকা নিয়ে তা স্যাম ডিসুজাকে দিয়েছিলেন তিনি। ওই ব্যাগে ৩৮ লাখ রুপি ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।

হলফনামাটি আমলে নিতে পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত। তিনি বলেছেন, মহারাষ্ট্র সরকারের ক্ষতি করতে যে এ মামলা সাজানো হয়েছে, সে দাবি সত্য বলে প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। রাউত টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, এনসিবি কার্যালয়ের ভেতরে কেপি গোসাভি ও আরিয়ান খান একসঙ্গে বসে আছেন। গোসাভির ধরে রাখা একটি ফোনে কথা বলছেন আরিয়ান।