শিক্ষক নিয়োগে যেসব দুর্নীতির অভিযোগে সরগরম পশ্চিমবঙ্গ

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শরীরবিদ্যা ও কর্ম শিক্ষকতা পদে নিয়োগের দাবিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের এভাবে ধর্মঘট কর্মসূচি থেকে হটিয়ে দেয় পুলিশ। কলকাতা, ১৬ জুন
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের স্কুলে এবং মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে চলছে জেরবার অবস্থা। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ৭০ দিন ধরে অবস্থান ধর্মঘটে থাকা একদল চাকরি প্রার্থীর সঙ্গে চলে পুলিশের ধস্তাধস্তি। পুলিশ ওই কর্মসূচি পালনকারীদের কলকাতার কেন্দ্রস্থল ধর্মতলা থেকে হটিয়ে দেয়।

যেসব অভিযোগে সরগরম

রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মেয়ে, সিপিএমের এক নেতার স্বজন ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের এক সদস্যের বোনকে দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ সামনে এসেছে। পাশাপাশি সামনে এসেছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি না দিয়ে অকৃতকার্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়ার বিষয়টি।

রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মেয়ে, সিপিএমের এক নেতার স্বজন ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের এক সদস্যের বোনকে দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ সামনে এসেছে। সামনে এসেছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি না দিয়ে অকৃতকার্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়ার বিষয়টি।

বলা হচ্ছে, রাজ্য সরকারের প্রশ্রয়ে দালালেরা লাখ লাখ রুপি নিয়ে যেসব প্রার্থীর চাকরি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছে, সেসব প্রার্থীকে নিয়োগ পরীক্ষায় শুধু নাম ও রোল নম্বর লিখে সাদা খাতা জমা দিতে বলা হয়েছিল। আর এমন প্রার্থীদেরও চাকরি দেওয়া হয়েছে খোদ স্কুল সার্ভিস কমিশনের সৌজন্যে।

আদালতের দ্বারস্থ

এসব অভিযোগে অনেক চাকরিপ্রার্থী কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে সিবিআইর সুপারিশ অনুযায়ী এক মন্ত্রীর মেয়েকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৬৯ জন চাকরিতে যোগদানকারী শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মাদ্রাসায় নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ

মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় কলকাতা হাইকোর্ট যোগ্য ৭ প্রার্থীকে অবিলম্বে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, তাঁদের উপযুক্ত অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও অনভিজ্ঞ ৭ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আদালত যোগ্য ৭ শিক্ষককে অবিলম্বে নিয়োগের নির্দেশ দিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে ৭০ হাজার রুপি জরিমানা করেছেন। আর জরিমানার অর্থ ৭ প্রার্থীকে ১০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির অভিযোগও তদন্ত করছে সিবিআই। আর এসব দুর্নীতির ঘটনায় উত্তাল হয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতি।

পুলিশ হটিয়ে দিয়েছে ধর্মঘটকারীদের

এদিকে শিক্ষকদের চাকরি নিয়ে আবার কলকাতায় এক অঘটন ঘটেছে। ৭০ দিন ধরে কলকাতার কেন্দ্রস্থল ধর্মতলার স্বাধীনতাসংগ্রামী মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে আসছেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শরীরবিদ্যা ও কর্ম শিক্ষকতার জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১ হাজার ৬০০ প্রার্থী। অবিলম্বে তাঁদের নিয়োগপত্র দেওয়ার দাবিতে তাঁরা এত দিন নির্বিঘ্নে এ আন্দোলন করে আসছিলেন।

তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ অবস্থান ধর্মঘট ভেঙে দিয়ে তাঁদের হটিয়ে দেয়।
ওই প্রার্থীরা এ অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে এলেও রাজ্য সরকার তেমন কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি। যদিও মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, উত্তীর্ণ প্রার্থীদের অবিলম্বে নিয়োগ দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার ধর্মঘটকারীদের সঙ্গে পুলিশের বেশ ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশ কয়েকজনকে চ্যাংদোলা করে ও চুলের মুঠি ধরে পুলিশ ভ্যানে তোলে। ধর্মঘটকারীদের দাবি, এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন।

আবার উত্তাল

বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর আবার শিক্ষক পদে নিয়োগ নিয়ে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। দাবি উঠেছে, এভাবে পুলিশ টেনেহিঁচড়ে, চ্যাংদোলা করে, চুলের মুঠি ধরে আন্দোলনকারীদের তুলে নিতে পারে না।