শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় প্রণব মুখার্জিকে চিরবিদায়

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি

করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। এরপরও দেশের শীর্ষ রাজনীতিকদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর সম্পন্ন হলো তাঁর শেষকৃত্য। আজ মঙ্গলবার রাজধানী দিল্লির লোদি রোড মহাশ্মশানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, এক দিকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এবং অস্ত্রোপচার, তার ওপর করোনা সংক্রমণ—জোড়া ধাক্কা সামলাতে পারলেন না প্রণব মুখার্জি। অসুখের সঙ্গে প্রায় তিন সপ্তাহ লড়াই করে গত সোমবার পরলোক গমন করেন তিনি। প্রবীণ এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে সাত দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে ভারতে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৩১ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এই সময় আনুষ্ঠানিক কোনো বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না।

শেষকৃত্যের আগে প্রণব মুখার্জির প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। যেহেতু করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় এই আয়োজনে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর মরদেহ রাজাজি মার্গের বাসভবনের একটি ঘরে রাখা হয়েছিল। আর আরেক ঘরে একটি বেদি নির্মাণ করে সেখানে ছবি রেখে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন করা হয়।
ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত সেই বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন নেতা। করোনার কারণে এই আয়োজন খানিকটা সীমিতই ছিল। তবে অল্পসংখ্যক সাধারণ মানুষকেও শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ দেওয়া হয় সেখানে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রণব মুখার্জির এই প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। শ্রদ্ধা জানানোর সময় দুটি ছবি টুইটারে প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে তিনি লিখেছেন, ভারতকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন, তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে দেশবাসী।
প্রণব মুখার্জির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন তাঁর ছেলে ও সাবেক সাংসদ অভিজিৎ মুখার্জি। সুরক্ষা সরঞ্জাম পরেই এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেন তিনি। এ সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সবার পরনেই ছিল সুরক্ষা সরঞ্জাম।
পশ্চিমবঙ্গে শোকের ছায়া
এদিকে প্রতিনিধি, কলকাতা জানিয়েছেন, প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে নিজ জন্মভিটা বীরভূমের নানুর থানার কীর্ণহারের মিরিটি গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাঁর মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়সহ সব রাজনৈতিক দল শোক প্রকাশ করেছে। রাজ্য সরকার গতকাল এক দিনের জন্য সব সরকারি দপ্তরে ছুটি ঘোষণা করেছিল।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, ‘প্রণব মুখার্জি ছিলেন আমার অভিভাবকতুল্য। পেয়েছি তাঁর স্নেহ ও উপদেশ। তাঁর মৃত্যুতে জাতীয় জীবনে অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হলো।’
বীরভূমের সেই মিরিটি গ্রামেই কেটেছে প্রণব মুখার্জির শৈশব। রাষ্ট্রপতি কিংবা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালেও গ্রামের বাড়িতে যেতেন দুর্গাপূজায়। নিজেদের বাড়ির দুর্গামন্দিরে নিজেই পূজা দিতেন। চণ্ডীপাঠ করতেন। আর তাঁর কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ শোনার জন্য ছুটে যেতেন দূরদূরান্তের মানুষ। গত বছরও সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। সোমবার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর সেই বাড়ির সামনে তাঁর প্রতিকৃতি রেখে সেখানে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কংগ্রেস কার্যালয়ে এবং রাজ্য কংগ্রেসের প্রধান দপ্তর কলকাতার বিধান ভবনেও তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্থাপন করা হয়েছে প্রতিকৃতি।