সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বড় বরাদ্দ মমতার

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ছবি: এএফপি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোটারদের বড় সমর্থন পেয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনী প্রচারে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। জয়ের পর সে পথেই হাঁটছেন মমতা।

২০২১–২২ অর্থবছরের রাজ্য বাজেটে মমতা সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে যে পরিমাণ বরাদ্দ রেখেছেন, তা দেশটির অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় ঢের বেশি। এমনকি তা জাতীয় বাজেটে এই খাতে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে।

সংখ্যালঘু সমাজের উন্নয়নে ভারতে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় রয়েছে। এই মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০২০–২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার শুরুতে ৫ হাজার ২৯ কোটি রুপি বরাদ্দ রেখেছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৪ হাজার ৫ কোটি রুপি করা হয়। আর ২০২১–২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৮১০ কোটি রুপি। সেই হিসাবে, এক বছরে দেশটিতে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বরাদ্দ বেড়েছে ৮০৫ কোটি রুপি।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোটারদের বড় সমর্থন পেয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনী প্রচারে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। জয়ের পর সে পথেই হাঁটছেন মমতা।

এ তো গেল কেন্দ্রের হিসাব। তবে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সমাজের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বরাদ্দ বাড়িয়েছে মমতার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার। ২০২১-২২ অর্থবছরের রাজ্য বাজেটে এই খাতে ৪ হাজার ৭৭৭ কোটি রুপি বরাদ্দ রেখেছেন মমতা। অর্থাৎ, জাতীয় বাজেটের তুলনায় এই খাতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র ৩৩ কোটি রুপি কম। আগের অর্থবছরে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে মমতার বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬০০ কোটি রুপি। পশ্চিমবঙ্গে এক বছরে এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ১৭৭ কোটি রুপি।

ভারতে সংখ্যালঘুদের মধ্যে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ২০১১ সালে পরিচালিত আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতে মুসলমানের সংখ্যা ১৭ কোটি, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে প্রায় আড়াই কোটি মুসলমান, যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ।

পশ্চিমবঙ্গ, তথা ভারতে সংখ্যালঘু সমাজের উন্নয়ন বলতে অনেকাংশে মুসলমানদের উন্নয়নকে বোঝানো হয়। দেশটিতে বসবাস করা অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আর্থিকভাবে মুসলমানেরা সবচেয়ে প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে। জনমিতিক বিভাজনে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানের সংখ্যা কম।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটের মোট জনসংখ্যার সাড়ে ১১ শতাংশ মুসলমান। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে এই রাজ্যে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে মাত্র ৭২ কোটি রুপি বরাদ্দ ছিল। গুজরাটে কোনো সংখ্যালঘু দপ্তরই নেই।

এদিকে ভারতে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোয় সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বরাদ্দের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক নয়। জনসংখ্যার বিবেচনায় দেশটির সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশ। এখানে প্রায় ৪ কোটি মুসলিমের বসবাস, যা রাজ্যটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে উত্তর প্রদেশে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭ কোটি রুপি। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১৫৯ কোটি রুপি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটের মোট জনসংখ্যার সাড়ে ১১ শতাংশ মুসলমান। অথচ ২০২০–২১ অর্থবছরে এই রাজ্যে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে মাত্র ৭২ কোটি রুপি বরাদ্দ ছিল। গুজরাটে কোনো সংখ্যালঘু দপ্তরই নেই। শুধু বিজেপিশাসিত রাজ্য নয়, বরং যেসব রাজ্যে বিজেপির সরকার নেই, সেখানেও সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বড় অঙ্কের বরাদ্দের চিত্র সচরাচর দেখা যায় না। এ খাতে ২০২০–২১ অর্থবছরে মাত্র ৫৮৯ কোটি রুপি বরাদ্দ ছিল মহারাষ্ট্রে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অবস্থানে রয়েছে মমতার পশ্চিমবঙ্গ। সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে মমতা বরাবরই মনোযোগী। এবার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে এই খাতে বাড়তি নজর দিয়েছেন তিনি।