সকালে মন্ত্রীসহ চার নেতা গ্রেপ্তার, সন্ধ্যায় জামিন

সুব্রত মুখার্জি, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়
ফাইল ছবি

সকালে গ্রেপ্তারের পর সন্ধ্যায় জামিন পেলেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভার দুই সদস্য ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়। নারদ দুর্নীতি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিবিআই) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের এই দুই নেতা।

এই দুজনই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আজ সোমবার সকালে ফিরহাদ, সুব্রত ছাড়াও গ্রেপ্তার করা হয় মমতার মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য মদন মিত্র এবং তৃণমূলের আরেক সাবেক মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। শোভন অবশ্য দল পরিবর্তন করে বিজেপিতে গিয়েছিলেন এবং পরে বিজেপির সঙ্গেও তাঁর দূরত্ব বেড়েছে।

গ্রেপ্তারের পর সিবিআইয়ের চার নেতার বিরুদ্ধে অনলাইনে অভিযোগপত্র দেয়। বিকেলেই তাঁদের সিবিআইয়ের ভার্চুয়াল আদালতে তোলা হয়। সেখানে শুনানি চলে। সিবিআই আবেদন করে অভিযুক্ত চার নেতাকে ১৪দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার। অন্যদিকে আসামিরা আবেদন করেন জামিনের। শুনানি শেষে আদালত চার নেতার জামিন দেন।

আরও পড়ুন

আজ সকালে ফিরহাদ হাকিমকে তাঁর চেতলার বাসভবন থেকে সিবিআই তুলে নেওয়ার সময় এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ সময় তিনি বলেন, আদালতেই তিনি মোকাবিলা করবেন।

২০১৬ সালের মার্চে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের ঘুষ নেওয়ার এক কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়। তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৭ সালে মার্চে এই নারদা কেলেঙ্কারি মামলার তদন্তের ভার দেওয়া হয় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইকে। যদিও ২০১৬ সালে এই নারদা স্টিং অপারেশনের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর প্রথম এই মামলার তদন্ত ভার গ্রহণ করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট—ইডি।

সেই মামলায় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন চার মন্ত্রীসহ অন্য তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের আসামি করা হয়। কিন্তু মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মামলা চালাতে গেলে রাজ্যপালের অনুমতির প্রয়োজন হয়। সেই লক্ষ্যে সিবিআই রাজ্যপালের কাছে অনুমতি চাইলে দীর্ঘদিন পর রাজ্যপাল এই চার নেতার বিরুদ্ধে মামলা চালানোর অনুমতি দেন সংবিধানের ১৬৩ ও ১৬৪ ধারামতে।

মমতা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর পর সিবিআই নারদা মামলা চালানোর অনুমতি পাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন এক মাত্রা যোগ হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে গত ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একদল নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কের অর্থ গ্রহণের এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে দিল্লির নারদনিউজ ডট কম নামের একটি ওয়েব পোর্টাল। তারা একটি গোপন স্টিং অপারেশন করে বলেছে, তাদের হাতে রয়েছে এ-সংক্রান্ত ৫২ ঘণ্টার ফুটেজ।

আরও পড়ুন

২০১৬ সালের ১৪ মার্চ সেই ভিডিও কলকাতায় ফাঁস করে বিজেপি। এই তথ্য ফাঁসের পর বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিং অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেন। অন্যদিকে, বিরোধীদলীয় নেতা ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র অবিলম্বে নির্বাচন স্থগিত রাখার দাবি তোলেন। তিনি বলেছিলেন, মানুষের টাকা লুট করেছে তৃণমূল। ওদের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।

এই স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা-মন্ত্রীর ঘরে ঘরে, হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে টাকা। এই স্টিং অপারেশনে যাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ আসে, তাঁরা হলেন তৃণমূলের ছয়জন সাংসদ মুকুল রায়, সুলতান আহমেদ, সৌগত রায়, শুভেন্দু অধিকারী, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়; রাজ্য মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, সারদা-কাণ্ডে কারাবন্দী সাবেক মন্ত্রী ও বিধায়ক মদন মিত্র, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক ইকবাল আহমেদ এবং সাবেক আইপিএস পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ এম এইচ মির্জা।

আরও পড়ুন

সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ কর্ণ শর্মার ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ফাঁস হয়ে যায়। আর এ ঘটনা নিয়ে রাজ্যজুড়ে ঝড় ওঠে। সেই ঝড় সামাল দেওয়ার আগেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঝড়। এ তথ্য ফাঁসের পর তৃণমূল নেতা মুকুল রায় বলেছিলেন, ভোটের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ এক বড় ষড়যন্ত্র। মুকুল রায় এখন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও এবারের নবনির্বাচিত বিধায়ক।

এ ঘটনার পর স্টিং অপারেশনের দ্বিতীয় ফুটেজ ২০১৬ সালের ২১ মার্চ ফাঁস হয়। এ ফুটেজও কলকাতায় বিজেপি ফাঁস করে। সে ফুটেজে দেখা যায় তৃণমূলের এক সাংসদ ও এক ছাত্রনেতার ছবি। ওই ছাত্রনেতা হলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি শঙ্কু দেব পান্ডা ও হুগলির আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার।

এ ভিডিও ফাঁসের পর সাংসদ অপরূপা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিলেন, ‘এটি মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার এ ফুটেজ কেন্দ্র তদন্ত করুক। দোষী প্রমাণিত হলে এক সপ্তাহের মধ্যে আমি সাংসদ পদ ছেড়ে দেব। তবে সাংসদ অপরূপাকে টাকার বান্ডিল নিতে দেখা যায় স্টিং অপারেশনের ভিডিওতে। দ্বিতীয় এই ভিডিও ফাঁসের পর নারদনিউজ ডট কমের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সেদিন টাকা নেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়েও দিয়েছেন তৃণমূলের দুই সাংসদ সুব্রত বক্সি ও দীনেশ ত্রিবেদী।