ভারতে সরকার বিরোধিতার সুর চরমে

বিরোধীদলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। গতকাল নয়া দিল্লিতে
ছবি : এএনআই

সরকারি ‘ঔদ্ধত্য ও স্বৈরতান্ত্রিক’ মনোভাবের বিরুদ্ধে বিরোধী শক্তি যত একজোট হচ্ছে, ততই বেড়ে চলেছে দুই পক্ষের রেষারেষি। বুধবার রাজ্যসভায় ‘জবরদস্তি’ বিমা বিল পাস করা রুখতে সম্মিলিত বিরোধীদের মোকাবিলায় মার্শাল নিয়োগ করাকে কেন্দ্র করে যে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে, বিরোধীরা তাকে ‘গণতন্ত্র হত্যা’ বলে অভিহিত করে। ওই ঘটনা ও যেভাবে সংসদ চালানো হচ্ছে, তার প্রতিবাদ জানাতে বিরোধী নেতারা

বৃহস্পতিবার সকালে সংসদ ভবনে গান্ধীমূর্তিতে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে তাঁরা প্রতিবাদ মিছিল করে বিজয় চকে যান। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গেও দেখা করে বিরোধী নেতারা বলেন, মার্শালদের পাশাপাশি বাইরের লোককে রাজ্যসভায় ঢোকানো হয়েছিল। তাদের হাতে সাংসদদের নিগৃহীত হতে হয়েছে। নারী সাংসদেরাও বাদ যাননি।

বিরোধীদের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য বলে জানিয়েছে বিজেপি। শাসক দলের সাত মন্ত্রী বৃহস্পতিবার একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বিরোধী আচরণ ক্ষমার অযোগ্য। সংসদকে এই পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য দেশবাসীর কাছে বিরোধীদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। বিরোধীদের মারমুখী আচরণের জন্যই নির্ধারিত সময়ের আগে সংসদের অধিবেশন বন্ধ করে দিতে সরকার বাধ্য হয়। মন্ত্রীরা বলেন, মার্শালদের সঙ্গে একজনও বাইরের লোক ছিল না। রাজ্যসভায় যা ঘটেছে, তার ভিডিও ক্লিপ সরকার প্রকাশ করে। সেখানে সাংসদদের সঙ্গে মার্শালদের ধস্তাধস্তির ছবি ধরা পড়ে।

সরকার ও বিরোধী পক্ষের এই রেষারেষি ও বাদানুবাদের মধ্যেই বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ২০ আগস্ট বিভিন্ন দলের নেতানেত্রীদের বৈঠক ডেকেছেন। সেই বৈঠক হবে ভার্চ্যুয়াল। উপস্থিত থাকতে সোনিয়া ইতিমধ্যেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে। বিরোধী নেতাদের সঙ্গে পরামর্শের জন্য তিনি নৈশভোজের আয়োজন করবেন বলেও কংগ্রেস সূত্রে খবর।

সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই সরকার ও বিরোধী পক্ষের রেষারেষি তীব্র হয়ে ওঠে। ১৯ জুলাই অধিবেশন শুরুর আগের দিন পেগাসাস-কাণ্ডের কথা জানাজানি হয়। কৃষি আইন নিয়ে বিরোধী পক্ষ এমনিতেই ক্ষুব্ধ। আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকদের সঙ্গে তারাও মুখর। কৃষি আইনের পাশাপাশি কোভিড পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক হাহাকার, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি তাদের বহুদিনের। তার সঙ্গে যুক্ত হয় পেগাসাস-কাণ্ড। ফোনে আড়ি পাতার এই ঘটনা নিয়ে আলোচনায় সরকারের তীব্র অনীহা বিরোধীদেরও সংসদ অচল করার জেদ বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন এ নিয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভার ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা। প্রবল ওই হইহল্লার সুযোগে সরকার বিভিন্ন বিল বিনা আলোচনায় পাস করিয়ে নেয়।

মঙ্গল ও বুধবার বিক্ষোভ চরমে ওঠে। কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে বুধবার কোনো কোনো সদস্যকে অধ্যক্ষের সামনে থাকা টেবিলের ওপর উঠে পড়তে দেখা যায়। চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডুকে বিবৃতি দেওয়ার সময় কেঁদে ফেলতেও দেখা যায়। বুধবার বিমা বিল পাস করাতে বাধা দিতে বিরোধীদের সামলাতে ডাকা হয় মার্শাল বাহিনীকে। সরকারি হিসাবে ৩০ জন মার্শাল পুরুষ ও নারী ওয়েল ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়েন।

সাংসদদের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তিও বাধে। ধ্বনি ভোটে বিল পাস করানোর সঙ্গে সঙ্গে লোকসভার মতো রাজ্যসভার অধিবেশনও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার সকালে বিরোধী নেতারা সংসদ ভবন চত্বরে আসেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি বিভিন্ন বিরোধী নেতা গান্ধীমূর্তির সামনে জড়ো হয়ে সরকারি মনোভাবের নিন্দা করেন। সবাই হেঁটে প্রতিবাদ মিছিলেও শামিল হন।

রাহুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সংসদে আমাদের বলতে দেওয়া হয় না। তাই জনতার কাছে বলতে হচ্ছে।’ প্রবীণ নেতা শারদ পাওয়ার বলেন, ৫৫ বছরের সংসদীয় রাজনৈতিক জীবনে তিনি দেখেননি কোনো সরকার সংসদকে এভাবে অবজ্ঞা করছে। নারী সদস্যরা অসম্মানিত হচ্ছেন। এটা গণতন্ত্র হত্যা। বিরোধীদের প্রতিবাদ ও অভিযোগের জবাব দিতে এরপরই সরকারের সাতজন মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেন। তাঁরা বলেন, সংসদের অভ্যন্তরে বিরোধী আচরণের তদন্ত হওয়া দরকার। দোষীদের শাস্তিও দেওয়া উচিত।