সাঁওতালপল্লি থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের পথে দ্রৌপদী

ঝাড়খন্ডের সাবেক গভর্নর দ্রৌপদী মুর্মু
ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

ভারতের শাসক দল বিজেপি দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নিল ঝাড়খন্ডের সাবেক রাজ্যপাল আদিবাসী দ্রৌপদী মুর্মুকে। এনডিএ জোটের সমর্থন ভাগাভাগি না হলে এবং জোটহীন দলের বাড়তি সমর্থন পেলে দ্রৌপদীই হবেন ভারতের সপ্তদশ রাষ্ট্রপতি। এর আগে কংগ্রেস আমলে দেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন প্রতিভা পাতিল। দ্রৌপদী দ্বিতীয় নারী হলেও জিতলে তিনিই হবেন প্রথম রাষ্ট্রপতি, যিনি জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত।

মঙ্গলবার রাতে এনডিএ জোটের পক্ষে দ্রৌপদীর নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি পদের লড়াইটা হয়ে দাঁড়ায় দ্বিমুখী। বিরোধীদের প্রার্থী হিসেবে আগেই ঘোষিত হয়েছিল সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশোবন্ত সিনহার নাম। রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মঙ্গলবারেই তিনি তৃণমূল কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন। বিহারের এই রাজনীতিকের মোকাবিলা এবার হবে দ্রৌপদীর সঙ্গে।

দ্রৌপদীর জন্ম ১৯৫৮ সালের ২০ জুন, ওডিশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বৈদাপোসি গ্রামে। সাঁওতাল পরিবারের এই কন্যার জীবন কখনো সেই অর্থে মসৃণ ছিল না। অভাবের সঙ্গে লড়াই ছিল এই পরিবারের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু তবু লেখাপড়া ছাড়েননি তিনি। স্নাতক হওয়ার পর ওডিশার এক স্কুলে শিক্ষিকার চাকরি পান। দীর্ঘদিন বিনা ভাতায় শিক্ষকতা করার পর একটা সময় চাকরি ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। ময়ূরভঞ্জ জেলার রাইরঙ্গপুর নগর পঞ্চায়েতে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন ১৯৯৭ সালে। ক্রমেই বিজেপিতে তাঁর উত্থান।

দলের তফসিল উপজাতি মোর্চার জাতীয় সহসভাপতি পদ পান। বিধানসভা ভোটে জিতে বিধায়ক হন। ২০০০ থেকে ২০০৪ সালে ওডিশায় বিজেডি-বিজেপি জোট সরকারে তিনি পরিবহন, বাণিজ্য, মৎস্য ও পশুপালন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি ঝাড়খন্ডের রাজ্যপাল নিযুক্ত হন টানা ছয় বছরের জন্য।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ শরিকদের ভোট এক জোট করেও ২ দশমিক ২ শতাংশ ভোট কম হচ্ছিল। বিজেপি ও এনডিএ বিরোধী সব ভোট এক জোট হলে বিজেপি মনোনীত প্রার্থীর পরাজয় অবধারিত ছিল। সেই ঝুঁকি এড়াতে বিজেপি নেতৃত্ব অনেক ভেবেচিন্তেই দ্রৌপদীকে পছন্দ করেছেন। প্রথমত, এই মনোনয়নের মধ্য দিয়ে ওডিশার বিজেডির সমর্থন নিশ্চিত করা হলো। দ্রৌপদী জিতলে তিনিই হবেন প্রথম ওড়িয়া রাষ্ট্রপতি।

দ্বিতীয়ত, বিজেপি মনে করছে, দ্রৌপদী জনজাতি হওয়ায় ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার সমর্থনও তিনি পেতে পারবেন। কেননা ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও সাঁওতাল। তৃতীয়ত, এর ফলে দেশের সর্বত্র জনজাতিদের হিন্দুত্বের ছাতার তলায় নিয়ে আসা সহজতর হবে। চতুর্থত, নারীর ক্ষমতায়নের যে স্লোগান বিজেপি দিয়ে আসছে, তা সফল করার পাশাপাশি দেশের নারী সমাজের সমর্থন আদায় করা সম্ভবপর হবে।

লোকসভায় জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত ৬৩ আসনের সিংহভাগ জেতা সম্ভব বলে বিজেপি মনে করছে। বিজেপির ধারণা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তারা অন্ধ্র প্রদেশের ওয়াইএসআর কংগ্রেস ও তামিলনাড়ুর এআইডিএমকের সমর্থন আদায় করতে পারবে। এই ভোট নিশ্চিত হলে ২ দশমিক ২ শতাংশ ঘাটতি পুষিয়ে দ্রৌপদী জিতে যাবেন।

বিজেপির দুশ্চিন্তা সামান্য হলেও রয়েছে বিহার নিয়ে। বিরোধী প্রার্থী যশোবন্ত সিনহা বিহারের রাজনীতিক। এই সাবেক আমলা চাকরি ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। পরবর্তী সময়ে মতপার্থক্যের দরুন বিজেপি ছেড়ে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে।

বিহারে জনতা দলের (সংযুক্ত) সঙ্গে বিজেপি জোটবদ্ধ হলেও বিভিন্ন বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না। বিহারি রাজনীতিক যশোবন্তকে জেডি (ইউ) শেষ পর্যন্ত সমর্থন করবে কি না, এমন একটা সন্দেহ বিজেপিতে রয়েছে। যদিও অঙ্কের হিসাবে দ্রৌপদীর পাল্লা যথেষ্ট ভারী। পাল্লা আরও ভারী করে তুলেছে মহারাষ্ট্রে শিবসেনায় বিদ্রোহ। অধিকাংশ শিবসেনা বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বিরোধিতা করছেন। তাঁরা বিজেপির সঙ্গে সরকার গড়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তার প্রতিফলন ঘটলে দ্রৌপদী মুর্মুর জয় আরও মসৃণ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন