সামরিক নয়, শান্তিপূর্ণ সমাধান

ভারত সফরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আফগানিস্তানের সমস্যার সমাধান নিয়ে কথা বলেন।
ছবি : রয়টার্স

আফগানিস্তানে তালেবানের অগ্রগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, আফগানিস্তানের সমস্যার সমাধান সামরিকভাবে হবে না। শান্তিপূর্ণ সমাধানসূত্র বের করতে হবে। আফগান সরকার ও তালেবান নেতাদের তা আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে।

ব্লিঙ্কেন গত মঙ্গলবার রাতে দুই দিনের সফরে ভারতে আসেন। বুধবার সন্ধ্যায় সফর শেষে তিনি ফিরে যান।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয় ছাড়াও আঞ্চলিক সমস্যাবলি নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন ব্লিঙ্কেন। হায়দরাবাদ হাউসের সেই বৈঠকের পর দুই নেতা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ সরকারকে সম্পূর্ণভাবে আফগান জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। সেনা প্রত্যাহারের পর সে দেশের শান্তি প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব আফগান জনগণকেই দিতে হবে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও শান্তিপূর্ণ পালাবদলের প্রয়োজনীয়তার কথা জানান, যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহমতের ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে। ভারতও সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গী। তিনি বলেন, ২০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তখন ভালো ও মন্দ দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া হওয়াই স্বাভাবিক। তবে আঞ্চলিক উদ্বেগ প্রশমনে মতানৈক্যের তুলনায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে মতৈক্যই বেশি।

আফগানিস্তান প্রসঙ্গই ছিল এই দ্বিপক্ষীয় সফরের প্রধান আলোচ্য বিষয়। তার বাইরে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতা, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি স্থাপন, ‘কোয়াড’, মিয়ানমার সংকটসহ বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক বিষয় নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়। কোভিড প্রসঙ্গে ভারতের প্রাথমিক সহায়তার ভূয়সী প্রশংসা যেমন করেন ব্লিঙ্কেন, তেমনি টিকা তৈরিতে মার্কিন সহায়তার প্রসঙ্গের উল্লেখ করেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, টিকা তৈরির কাঁচামাল সরবরাহে যাতে বাধা না আসে, যুক্তরাষ্ট্র তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘ভারতীয় সাহায্যের প্রতিদান কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় দিতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াই আমরা জারি রাখব।’

বুধবার সকালে ব্লিঙ্কেন প্রথম বৈঠক করেন তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামার বিশেষ প্রতিনিধি এনগোডুপ ডোনচুংসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। সম্প্রতি ভারতের নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার, আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও তার মূল্যবোধ নিয়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় নানা প্রশ্ন উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রশাসনেরও এই বিষয়ে কিছু স্বতন্ত্র অভিমত রয়েছে। সেই নিরিখে এই বৈঠক গুরুত্ব পেয়েছিল। সর্বোপরি ছিল দালাই লামার প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা।

ব্লিঙ্কেন সেই বৈঠকে বলেন, ‘ভারত ও আমেরিকার জনগণ সম্মান, সাম্য, আইনের শাসন, ধর্মাচরণ, ধর্মীয় বিশ্বাসসহ সব ধরনের মৌলিক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমরা মনে করি, সরকারে সব মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটা দরকার এবং প্রত্যেকের সমান সম্মান পাওয়া উচিত। এগুলোই গণতন্ত্রের মূল। এগুলো ধারণ করে চলাই পৃথিবীর প্রাচীনতম ও বৃহত্তম গণতন্ত্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমাদের গণতন্ত্রে এটা এক সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা। কখনো তা বেদনাদায়ক, কখনোবা কুৎসিত। কিন্তু গণতন্ত্রের শক্তি হলো মৌলিক সেই উপাদান ধারণ করে এগিয়ে চলা।’

ব্লিঙ্কেন বলেন, পৃথিবীর দুই বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উচিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও উন্নতি ঘটানো। আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলা। ভারতীয় গণতন্ত্র, তার স্বাধীন মিডিয়া, আদালত, নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থার প্রশংসা করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মন্দার সময়েও দুই প্রাণবন্ত গণতান্ত্রিক দেশ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আঁকড়ে জোটবদ্ধ। এটা গুরুত্বপূর্ণ।

দিল্লি ত্যাগের আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেখা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে।