সীমান্তে গরু পাচারে বিএসএফ কর্মকর্তার নাম

সীমান্তে ধরা পড়া গরু
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে গরু পাচারচক্রে এবার উঠে এসেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) দুই কর্মকর্তার নাম। সেই সঙ্গে নাম এসেছে পাচার চক্রে জড়িত সীমান্তের তিন বড় ব্যবসায়ীর নামও।

গতকাল বুধবার এই গরু পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ধরার জন্য সীমান্ত এলাকায় পাচারকারীদের বাড়ি তল্লাশি করে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিবিআই) ১২টি দল। এই দলে ছিলেন ১১০ জন সিবিআই কর্মকর্তা ও কর্মী। তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকার ১২টি জায়গায় একযোগে তল্লাশি চালান। এই তল্লাশি চলে কলকাতা, সল্টলেক, মুর্শিদাবাদ ও শিলিগুড়িতে।

২১ সেপ্টেম্বর কলকাতার দুর্নীতি দমন শাখায় এ–সংক্রান্ত মামলা হয়। সেই মামলায় উঠে আসে বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের সাবেক কমান্ড্যান্ট সতীশ কুমার এবং পাচার চক্রের তিন ব্যবসায়ীর নাম। তাঁরা হলেন মহম্মদ এনামুল হক, আনারুল সেখ এবং মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা। এই তিন ব্যবসায়ী সরাসরি গরু পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। তাঁদের সঙ্গে ছিল বিএসএফের কমান্ড্যান্টের গভীর হৃদ্যতা। এ সম্পর্কের জেরে সীমান্তে নিয়মিত চলত গরু পাচার। আর সীমান্তে পাচারকালে কোনো গরু ধরা পড়লে, তা বিএসএফ আটক করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সস্তায় নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হতো। ওই সব গরুকে রোগা, অসুস্থ ও বাছুর হিসেবে চিহ্নিত করে নিলামে তোলা হতো। আর নিলামে কিনতেন পাচারকারী ওই তিন ব্যবসায়ী।

তারপর আবার তারই ওই গরু পাচার করে দেওয়া হতো বাংলাদেশে। এরপর বিক্রির এই টাকা ভাগ হতো বিএসএফ, সীমান্তের শুল্ক বিভাগ এবং পুলিশের মধ্যে। ফলে বিএসএফের সক্রিয় সমর্থনে সীমান্তে গরু পাচার ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা।

২০১৮ সালে এই গরু পাচার নিয়ে প্রথম তদন্ত শুরু করে সিবিআই। তখন উঠে আসে মালদহ ও মুর্শিদাবাদের দায়িত্বে থাকা বিএসএফ কমান্ড্যান্ট সতীশ কুমারসহ ওই সব পাচারকারীর নাম। সতীশ কুমার দায়িত্বে ছিলেন ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। সতীশ কুমার সীমান্ত থেকে ২০ হাজার গরু আটক করলেও তার কোনো হিসাব পায়নি সিবিআই। বিএসএফের সঙ্গে পাচার চক্রের এতই দহরম–মহরম ছিল যে পাচারকারী এনামুলের ‘হক স্টিল ইন্ডাস্ট্রি’তে মোটা বেতনে এনামুল হক চাকরি দিয়েছিলেন সতীশের পুত্র ভুবন ভাস্করকে। এ ছাড়া ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ৪৫ লাখ রুপি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ধরা পড়েন অন্য এক বিএসএফ কমান্ড্যান্ট জিবু ম্যাথু। সেই মামলায়ও গ্রেপ্তার হন গরু পাচারকারী এনামুল হক। জিবু ম্যাথুকে সেদিন ধরা হয়েছিল ছত্তিশগড়ের আলাপুঝা স্টেশন থেকে। পরে তাঁকে আনা হয় মালদহে।

সতীশ কুমার পশ্চিমবঙ্গ থেকে বদলি হয়ে এখন আছেন ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরে। সেখানেও গতকাল তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। তদন্তে সিবিআই জানতে পারে, এনামুলের বাড়ি রয়েছে নেপাল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়েও। এদিকে মুর্শিদাবাদের কুলগাছি-রামচন্দ্রপুরের এনামুলের বাড়ি, রাইস মিল, স্টিল মিল তল্লাশি করে সিবিআই পেয়েছে বেশ কিছু নথি ও কাগজপত্র। সঙ্গে গরু পাচারের বিভিন্ন রুটের ছবি।

এদিকে গতকাল রাজ্যজুড়ে এই পাচারকারীদের ধরতে অভিযান চালায় সিবিআই। এরপর সতীশ কুমারের সল্টলেকের বি-জে ব্লকের দোতলা একটি বাড়ি এবং নিউটাউনে তাঁর কেনা একটি বড় আবাসন সিল করে দেয় সিবিআই। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় বহু কাগজপত্র। এ ছাড়া এদিন এনামুলসহ অন্য পাচারকারীদের ডেরায়ও অভিযান চালায় সিবিআই। তবে কোনো পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি সিবিআই।