সেই নন্দীগ্রামে তৃণমূলে কোন্দল

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী ।
ছবি: প্রথম আলো

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে কোন্দল দেখা দিয়েছে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়া তৃণমূল নেত্রী শিউলি সাহার মা বনশ্রী খাড়াকে এবার দল থেকে তাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূলের নেতারা। এই নন্দীগ্রামে বিধানসভায় লড়ে হেরেছেন মমতা।

বনশ্রী খাড়া স্থানীয় নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এবারের নির্বাচনে দলবিরোধী কাজ করেছেন। কাজ করেছেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারীর পক্ষে। তাই তাঁকে নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত থেকে বিতাড়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

এই পঞ্চায়েতে রয়েছেন ১৩ জন সদস্য। এর মধ্যে ১১ জন সদস্য মন্ত্রী শিউলি সাহা মা বনশ্রী খাড়ার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছেন স্থানীয় বিডিওর কাছে। তৃণমূলের অভিযোগ, বনশ্রী খাড়া দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে শুভেন্দুর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেছেন। তাই তাঁকে আর নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতে রাখা যাবে না।

অন্যদিকে মায়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব তোলায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন মন্ত্রী শিউলি সাহা। যদিও শিউলি সাহা নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণবিরোধী আন্দোলনে সেই ২০০৭ সালে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে সেদিনকার বাম ফ্রন্টের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন।

এদিকে পূর্ব মেদিনীপুরে এই অনাস্থা প্রস্তাব শুধু শিউলি সাহার মা ও পঞ্চায়েত প্রধান বনশ্রী খাড়ার বিরুদ্ধে আনা হয়নি। আনা হয়েছে আরও দুই সদস্য স্বদেশ দাস ও সানোয়ার শাহের বিরুদ্ধে। এই দুজনও শুভেন্দুর পক্ষে কাজ করেছেন।

৩৪ দলত্যাগীর মধ্যে জিতেছেন মাত্র ৫ জন

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে প্রচারে একটা ঝড় উঠেছিল বিজেপির পক্ষে। বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বলিউড তারকা মিঠুন চক্রবর্তী থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র এই রাজ্যে প্রচারে এসে সেই ঝড় তুলেছিলেন। এ ছাড়া নির্বাচন নিয়ে ভারতে যতগুলো সমীক্ষা হয়েছে, তাতে কোনো সমীক্ষা এভাবে রেকর্ড সংখ্যক আসনে তৃণমূলের জয়ের ইঙ্গিত দেয়নি। প্রতিটি জনমত সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল লড়াই হবে তীব্র, হাড্ডাহাড্ডি। তবে জয়ের সম্ভাবনা তৃণমূলের বেশি। সর্বোচ্চ ১৬০-১৮০ আসনে জেতার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল জনমত সমীক্ষায়।
ফলে বিজেপির ওই প্রচারঝড়ে ভেঙে যায় তৃণমূলের বহু নামীদামি রাজনৈতিক শক্ত গাছ। তৃণমূল থেকে এই দলত্যাগের একটা লাইনও পড়ে গিয়েছিল নির্বাচনী ময়দানে। জানা গেছে, ছোটখাটো নেতাদের বাদ দিলে অন্তত ৩৪ জন তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেসের নেতা, সাংসদ, বিধায়ক এবং জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এই ৩৪ জনের মধ্যে ২৮ জন তৃণমূলের, ৫ জন সিপিএমের ও ১ জন কংগ্রেসের।

আর এই দলত্যাগী ৩৪ জনকে মনোনয়ন দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু দুর্ভাগ্য বিজেপির, এই দলত্যাগী ৩৪ জনের মধ্যে জিতেছেন মাত্র ৫ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ৩ জন তৃণমূলের এবং ২ জন সিপিএম থেকে আসা দলত্যাগী প্রার্থী। বাকিরা হেরে গেছেন। অথচ এই দলবদলের তালিকায় ছিলেন মমতার মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, হাওড়ার সাবেক মেয়র রথীন চক্রবর্তী, সিঙ্গুরের মাস্টার মশাই রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আসানসোলের মেয়র জিতেন তেওয়ারি, নারীনেত্রী বৈশালী ডালমিয়া থেকে নামীদামি রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। তবে তাঁরা সবাই হেরে গেছেন।