সৌমিত্রের অবস্থা উদ্বেগজনক, ভেন্টিলেশনে দেওয়া হতে পারে

অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

করোনায় আক্রান্ত পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। আজ সোমবার তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হতে পারে বলে বেলভিউ নার্সিংহোম সূত্রে জানা গেছে। গত মঙ্গলবার সৌমিত্রকে বেলভিউতে ভর্তি করা হয়।

গতকাল সন্ধ্যার দিকে বেলভিউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া মেডিকেল বুলেটিনে জানানো হয়, একই রকম রয়েছে সৌমিত্রের শারীরিক অবস্থা।  তাঁর মধ্যে কিছুটা মানসিক অস্থিরতা ও উদ্বেগ লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু গভীর রাতে চিকিৎসকদের সূত্রে জানা যায়, জ্বরের পাশাপাশি সংক্রমণ রয়েছে বুকে। বেড়েছে অস্থিরতা। তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হতে পারে।

গত শনিবার রাতে সৌমিত্রকে দুই ইউনিট প্লাজমা দেওয়া হয়েছিল। গতকাল দেওয়া হয়েছে আরও এক ইউনিট।

গতকাল সৌমিত্রের ফুসফুসের সিটি স্ক্যান করা হলে সেখানে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ ছাড়া সংক্রমণ ধরা পড়ে তাঁর মূত্রনালিতেও। বেলভিউ নার্সিংহোমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ ট্যান্ডন গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, এই প্রবীণ অভিনেতাকে সুস্থ করে তোলার জন্য চিকিৎসা চলছে। রাজ্য সরকারও এখানে দুজন সরকারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ করেছে। এই নিয়ে সৌমিত্রের চিকিৎসার জন্য ১৬ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এখন নিয়মিত চলছে অক্সিজেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গতকাল তাঁকে সর্বাধিক মাত্রায় অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকেরা চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন তাঁকে ভেন্টিলেশন দেওয়ার। যদিও গতকাল মেয়ে পৌলমী জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবার শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটা ভালো। তবে সংকট কাটেনি।

হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়েছে, আজ তাঁর শ্বাসনালিতে টিউব পরানো হবে। মস্তিষ্কের সমস্যায় যাতে জল, পানীয় কিংবা খাবারের কণা খাদ্যনালির বদলে শ্বাসনালিতে ঢুকে গিয়ে প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে জন্যই এই সুরক্ষা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে এই টিউবটি আবার ভেন্টিলেশন দেওয়ার সময় কাজে ব্যবহার করা যাবে। চিকিৎসকেরা এ কথাও বলেছেন, করোনার পাশাপাশি এখন তাঁর শরীরে বাসা বেঁধে থাকা অন্যান্য রোগের চিকিৎসা জরুরি হয়ে পড়েছে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর একটি বায়োপিকের শুটিংয়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন সৌমিত্র।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বয়স এখন ৮৫ বছর। ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। পড়াশোনা করেন হাওড়া জেলা স্কুল, স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতার সিটি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বাংলা চলচ্চিত্রের এই দিকপাল ২০১২ সালে পেয়েছেন ভারতের চলচ্চিত্র অঙ্গনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার। এ ছাড়া পেয়েছেন দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফ্রান্সের ’লেজিয়ঁ দ্য নর’ (২০১৮)। পেয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মভূষণসহ (২০০৪) ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার, ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার।